Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ: ভাতা পাচ্ছেন অন্যজন

নেত্রকোণা প্রতিনিধি:

নেত্রকোণা প্রতিনিধি:

জুন ৯, ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম


জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ: ভাতা পাচ্ছেন অন্যজন

নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলায় জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দিয়ে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতা চেয়ারম্যান, মেম্বারদের পছন্দসই ব্যক্তির নামে প্রতিস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিকার চেয়ে দুই ভোক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন।

জীবিত থেকেও মৃতরা হলেন, খলিশাউড় ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গরুয়াকান্দা গ্রামের মৃত জহুর আলীর ছেলে মোঃ হযরত আলী (৭১), হোগলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জামিরাকান্দা গ্রামের মৃত সুরুজ আলী ফকিরের স্ত্রী ও মৃত ইন্তাজ মোড়লের মেয়ে জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে খাদিজা আক্তার।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক ভাতার আওতায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত একজন উপকারভোগী হিসেবে বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত দুই সেশনে তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নেন।

সেখানে সমাজ সেবা অফিসার জানান, খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেয়া প্রত্যয়ন পত্রে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের দেয়া পছন্দসই ব্যক্তিকে তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ।

সুবিধা বঞ্চিত জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত দুই দফা অন্যান্যদের নামে বয়স্ক ভাতা আসলেও তার নামে আসেনি। পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে সমাজ সেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, হোগলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন এর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রে তাকে মৃত দেখিয়ে তার নামের স্থলে নূর মিয়ার কন্যা হালিমা খাতুনের নামে ভাতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করার পরও প্রতিকার পাননি।

পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার ২০১৯ সাল থেকে বিধবা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ইতঃপূর্বে ব্যাংক ও পরে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করেছেন। এই ভাতার টাকা দিয়ে তিনি নিজের ব্যয় বহন করতেন। গত বছরের জুন মাস থেকে তিনি ভাতা পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি জানতে তিনি সমাজসেবা অফিসে গিয়ে খবর নিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, ‘আপনি তো মারা গেছেন’। তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদকে প্রথমে পরিষদে ও পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি।

খলিশাউড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার জানান, একই গ্রামের হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে সমাজ সেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।

হোগলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলছেন, আমার অজান্তে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবশত এমনটি করেছে। তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে আমি কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি।

পূর্বধলা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানগণ সুবিধাভোগীদের নামে মৃত্যু সনদ ইস্যু করে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ পাঠানোর প্রেক্ষিতে উক্ত ভাতাভুগী দুইজনকে মৃত দেখিয়ে তাদের স্থলে চেয়ারম্যানদের দেয়া নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আমরা যেহেতু এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে তা সংশোধনের ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খবিরুল আহসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে জানান, জীবিত ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দিয়ে তার ভাতা কেটে নিয়ে অন্য জনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর আগেও খাদিজা আক্তার প্রতিকার চেয়ে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সমাজসেবা বিভাগকে এ সব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সংশোধন ও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিআরইউ

Link copied!