Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫,

ভবনের ছাদে ঝুঁকি, শিক্ষকের ঘাটতিতে বিপর্যস্ত নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মনবাড়িয়া) প্রতিনিধি

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মনবাড়িয়া) প্রতিনিধি

মে ৬, ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম


ভবনের ছাদে ঝুঁকি, শিক্ষকের ঘাটতিতে বিপর্যস্ত নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যেখানে শিক্ষার পরিবেশ হবার কথা আনন্দময় ও নিরাপদ, সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা নিয়ে। ভয় আর ভাঙা ভবনের মাঝেই চলছে পাঠদান। ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বিদ্যালয়টিতে মাত্র তিনজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। 

শিক্ষক সংকটের কারনে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী, যাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।নগরীরচরের শিশুরা আজও কাঁধে বই নিয়ে ক্লাসে আসে স্বপ্ন নিয়ে, অথচ তাদের আশপাশে শুধু ঝুঁকি আর অবহেলা। দ্রুত ভবন বাস্তবায়ন না হলে, তবে ভবন নয়, ধসে পড়বে একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নগরীচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বতমার্নে এই বিদ্যালয়ে ১৩৯জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ৫টি পদ রয়েছে এই বিদ্যালয়ে।  বিদ্যালয়টিতে মাত্র ০৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষক সংকট থাকলেও সেখানে শূন্যপদে শিক্ষক প্রদায়ন করা হয়নি।  এতে করে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারনে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে  মাত্র ৩জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে।

নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষ পাঠদানের অনুপযোগী। উপরতলার দুটি কক্ষের মধ্যে একটিতে চলছে অফিসিয়াল কাজ ,অন্যটিতে চলছে একযোগে একাধিক শ্রেণির পাঠদান। প্রতিদিনই আসছে  শতাধিক শিক্ষার্থী। পলেস্তারা খসে পড়ছে, ছাদে ফাটল, ক্লাসরুমে নেই পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। কিছুদিন আগে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী, যাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শুধু ভবন সংকট নয়, শিক্ষক সংকটও প্রকট। পাঁচটি শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। একজন শিক্ষককে প্রতিদিন একাধিক শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে মানসম্পন্ন পাঠদান তো দূরের কথা, মৌলিক শিক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার  বলেন, “স্যার, আমাদের ক্লাসে জায়গা কম, খুব গরম লাগে। অনেক সময় ছাদ থেকে মাটির টুকরা পড়ে। ভয় লাগে ক্লাসে বসে। এখন দোতলায় একসাথে তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণীর সবাই ক্লাস করি।  ছাদ থেকে মাটির টুকরা পড়ার পর থেকে আমার অনেক বন্ধু স্কুলে আসে না।

নগরীরচর গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ফাউন্ডেশন ছাড়া একতলা হওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় তলা করা হয়েছে। ভবনটির নিচতলায় ফাটল ধরেছে পলেস্তারা খুলে পড়ে যাচ্ছে। ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেনা। দ্বিতীয় তলায় একই রুমে একসাথে তিন শ্রেণীর ক্লাস নেওয়া হয় এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা হচ্ছে না।  বিদ্যালয়ের শিক্ষকও সংকট রয়েছে এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলী বলেন,“বিদ্যালয়ের ভবন ও শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের।  একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভবনের উপরতলার দুটি কক্ষ ছাড়া আর কিছু ব্যবহারযোগ্য নয়। শিক্ষকও পর্যাপ্ত নেই—তিনজন দিয়ে সব শ্রেণি সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন,“বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট সম্পর্কে আমরা অবগত। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষক পদ পূরণের বিষয়েও সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।”

আরএস

Link copied!