ফরিদপুর প্রতিনিধি
জুলাই ১০, ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মাহফুজ খান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠেছে।
যদিও তার কোনো দলীয় পদপদবি নেই, তবুও তিনি যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে জমি দখল, চাঁদাবাজি, সালিশ বাণিজ্য ও থানায় দালালির মতো কার্যক্রমে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কেউ মুখ খুললে তাকে হুমকি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকরাও এর বাইরে নন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদকে হুমকি দেন মাহফুজ খান।
হারুন-অর-রশিদ বাংলানিউজ২৪.কম-এর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি এবং দৈনিক ইনকিলাবের সালথা উপজেলা সংবাদদাতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাহফুজ খানের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের জমি দখল ও জোরপূর্বক মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগে সালথা উপজেলার সেনহাঁটি গ্রামের হারুনার রশিদ (৪০) নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই বিষয়ে সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি মাহফুজ খানের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ওই সাংবাদিককে ফোনে হুমকি দেন।
সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমি ফেসবুকে লিখেছিলাম—সালথায় পদবিহীন এক যুবদল কর্মীর বিরুদ্ধে জমি দখল ও মেহগনি গাছ কাটার অভিযোগ! আদালতে অভিযোগ দায়ের। এরপর মাহফুজ আমাকে ফোন করে বলেন, ‘তুমি আমার অনুমতি ছাড়া কীভাবে আমার বিষয়ে লিখলে? ফেসবুক পোস্ট এখনই মুছে ফেলো, না হলে দেখে নেব।’”
স্থানীয়রা জানান, মাহফুজ খান নিজেকে বিভিন্ন পোস্টার ও ফেসবুকে সালথা উপজেলা যুবদলের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তবে দলে তার কোনো স্বীকৃত পদ নেই। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেত্রীর সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো, চাঁদা দাবি ও হয়রানিতে জড়াচ্ছেন তিনি। একইসঙ্গে থানায় প্রভাব খাটিয়ে সালিশ বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে মাহফুজ খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি কোনো অন্যায় করিনি।”
এ বিষয়ে সালথা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “নিউজ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। বিষয়টি নিয়ে প্রেসক্লাবে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কেউ দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি মো. রাজিব হোসেন ফোনে ব্যস্ত থাকায় তাৎক্ষণিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি পরে ফোন করে মন্তব্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, “দলীয় পরিচয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাই এবং সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানাই।”
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, “সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইএইচ