Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সন্দেহ হচ্ছে গুলশান থানার পুলিশ রহমত উল্লাহকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে : শাকিব খান

আকাশ নিবির

আকাশ নিবির

মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম


সন্দেহ হচ্ছে গুলশান থানার পুলিশ রহমত উল্লাহকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে : শাকিব খান

দেশের সুপাস্টার নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক রহমত উল্লাহ। গত বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সশরীরে এফডিসি উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করেন তিনি।

এ নিয়ে গতকাল শনিবার গুলশান থানায় শাকিব খান একটি মামলা দায়ের করতে গেলে তার কোন প্রমাণ না থাকায় আমলে নেননি মামলাটি। পরে তাকে তাকে কোর্টে গিয়ে মামলা পরামর্শ দেন গুলশান থানা পুলিশ। অবশ্য শাকিব খান কোর্টে গিয়ে মামলাটি দায়ের করার কথা জানালেও আজ রবিবার মিন্টু রোডের ডিবির কার্যালয়ে সন্ধ্যায় আসেন এবং ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সাথে দেখা করেন। 

তবে তার অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বলে আশ্বস্থ  করেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। সেখানে কথা বলা শেষে গণমাধ্যমকে শাকিব খান বলেন, ‘রহমত উল্লাহ একটি বাটপার। তিনি কোন প্রযোজক নন। দ্রুত দেশে বাইরে পালিয়ে যেহে পারেন বলে দাবি করেন এই দেশসেরা নায়ক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বাস করি ডিবি দ্রুততার সাথে সকল মামলার মতো আমার এই মামলাটি তারা খতিয়ে দেখবেন। তবে তার অবাক লাগে গতকাল এই বাটপার রহমত উল্লাহের বিরুদ্ধে মামলা করতে গুলশান থানায় যান কিন্তু পুলিশের তার মামলাটি আদলে কেন নিলেন না। তিনি সন্দেহ করে জানান রহমত উল্লাহকে দেশ ছেড়ে গুলশান থানা পুলিশ সাহায্য করছেন।’

এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যম তাকে প্রশ্ন ছুঁড়েন এতো লোক থাকতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে কেন সেই প্রযোজকের অভিযোগ? তিনি বলেন, ‘রহমত উল্লাহ তো কোন প্রযোজক না এবং বার বার রহমত উল্লাহকে বাটপার বলে সম্বোধন করতেও দেখা যায় তাকে। তবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, তার বিষয়টি ডিবি খতিতে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।   

 এ নিয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানান, ‌‍‍`তিনি একজন প্রযোজকের বিরুদ্ধে একটি অভিযােগ নিয়ে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন প্রযোজক এসেছেন তিনি যেন পালিয়ে না যায়। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা বিষয়টি দেখছি সেই প্রযােজক কোথায় আছেন। সঠিক তদন্ত করে তার অভিযোগ আদলে নিবেন বলে জানান তিনি।   

আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটি ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। কারণ হিসেবে শাকিব খানের অসহযোগিতা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

এর আগে উপরোক্ত ঘটনাগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষী বলে এই প্রযোজক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্ততার হন। পরবর্তীতে সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান। শাকিবের সাথে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এ ব্যাপারে নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (মামলা নং: NSW Police reference no: E 62494959) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী ছিলেন।

এ সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করছিলেন শাকিব খান ও অভিনেত্রী শিবা আলী খান। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, টাইগার রবি প্রমুখ।

নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (NSW Police reference no: E 62494959) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন—চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন— ২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসাসফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে।

শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই। ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় তিনি যে সকল ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেয়া হল—

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ বায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়ত শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো

৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করে বসলেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করলেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (মামলা নং: NSW Police reference no: E 62494959) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান।
 

Link copied!