Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সব মুসলিম দেশে কি একইদিনে ঈদ পালনের সুযোগ আছে?

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ২, ২০২২, ০২:০৪ এএম


সব মুসলিম দেশে কি একইদিনে ঈদ পালনের সুযোগ আছে?

বাংলাদেশে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতরের দিন চূড়ান্ত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সাধারণত ২৯ রোজার দিন বিকেলে এ কমিটি বৈঠকে বসে। সেদিন যদি দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায় তাহলে পরদিন ঈদের ঘোষণা দেয় ফাউন্ডেশন আর তা না হলে ত্রিশ রোজা শেষেই ঈদ হয়ে থাকে। সাধারণত সৌদি আরবে যেদিন ঈদ হয় তার পরদিন বাংলাদেশে ঈদ পালিত হয়। আবার কিছু জায়গায় পালিত হয় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে। আর চাঁদ দেখা নিয়ে প্রতিবছরই হয় বিতর্ক।

বাংলাদেশের সুপরিচিত পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক ড: শমসের আলী বলছেন ইসলাম ধর্মের বিধান মেনেই মুসলিম বিশ্ব একদিনেই ঈদ পালন করতে পারে। তার মতে চাঁদ নিজের দেশেই দেখতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

তিনি বলেন, "কোরআনে আছে এই মাসের সাক্ষ্য পেলে রোজা রাখবা। নিজে দেখতে বলেনি। কারও সাক্ষ্য পেলে হবে। রসুল সাঃ সাক্ষ্য পেয়ে রোজা ভেঙ্গেছেন। ঈদ করেছেন"। সেটা নিজের দেশে হতে হবে তার কোন মানে নেই। ঈমাম আবু হানিফা ও নবী বলে গেছেন যে তোমরা একই দিনে রোজা রাখবে ও রোজা ভাঙ্গবে। চাঁদ উঠে গেলে চান্দ্রমাস শুরু। এটা করলেই আর অসুবিধা হবে না। 

শমসের আলী বলছেন মক্কা মুসলমানদের পবিত্র স্থান। সেখানে চাঁদ দেখা গেলে তার ভিত্তিতেই সব মুসলিম দেশে ঈদ পালিত হতে পারে। দেশগুলোর মধ্যে কয়েক ঘণ্টার সময়ের ব্যবধান এক্ষেত্রে বড় কোন সমস্যা নয়।এছাড়া মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসিও একই দিনে রোজা ও ঈদের সুপারিশ করেছে।তারপরেও বাংলাদেশে সৌদি আরবের পরদিন হচ্ছে, কারণ হিসেবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির যুক্তি হচ্ছে ইসলামের নবী চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং রোজা ছাড়ার কথা বলেছেন।

চাঁদ বিশ্বের কোথাও দেখা গেলেই হবে ?
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের একদিন পর নতুন চাঁদ দেখা যায় আবার আরব বিশ্বে বাংলাদেশের তিন ঘণ্টা পর সূর্যাস্ত হয়। সে জন্য তিন ঘণ্টা পর আরব বিশ্ব নতুন চাঁদ দেখতে পেলেও সময়ের ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশে তা দেখতে পাওয়া যায় না। তবে আবার সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া আরব বিশ্বের মতো করেই ঈদ পালন করে। তাদের অনুসরণ করে আফ্রিকার কিছু মুসলিম দেশও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলছেন, এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত অর্থাৎ বিশ্বের কোন মুসলিম দেশে ইসলামি বিধান মোতাবেক চাঁদ দেখা নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটিই সব মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশের আমরা তো বেশিরভাগই হানাফি মযহাবে বিশ্বাসী। এর প্রধান আবু হানিফার বক্তব্য ছিলো এটাই যে পৃথিবীর কোন এক জায়গায় চাঁদ দেখা গেছে এ সংবাদ পেলেই রোজা করতে হবে ও ঈদ হবে। এ জিনিসটা ওনার সময়ে পালন অসম্ভব ছিলো কারণ তখন আরেক শহরের খবর আসতোনা। এখন তো বিশ্বের এক প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে পাই। তাই আবু হানিফার কথা পালন করা কর্তব্য"।

রোজা বা ঈদের জন্য চাঁদ তো দেখা যেতেই হবে, কিন্তু পৃথিবীর কোথাও দেখা গেলে তার আলোকেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা রোজ ও ঈদ করতে পারবে।

সরকারের সিদ্ধান্তই দেশের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ভালো
এ বিষয়ে সবাই একমত যে খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার পরই হিজরি সনের একটি নতুন চান্দ্র মাস শুরু হবে, এটাই ইসলামের বিধান। সে কারণে বহু ধর্মীয় নেতা এখনো পর্যন্ত নিজ নিজ দেশে খালি চোখে চাঁদ দেখা যাওয়ার ওপরই নির্ভর করতে চান।

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম আকবর হোসেন বলছেন, ঈদের বিষয়ে যে শরিয়াহ বোর্ড সরকারকে পরামর্শ দেয় তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলে জনমনে বিভ্রান্তি হবে না বলে মনে করেন তিনি।

আন্তর্জাতিকভাবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল
২০১৬ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিল তুরস্কের উদ্যোগে। সেখানে তুরস্ক, কাতার, জর্ডান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরোক্কো সহ ৫০টি দেশের ধর্মীয় পন্ডিত এবং বিজ্ঞানীরা অংশ নেন।

ইন্টারন্যাশনাল হিজরি ক্যালেন্ডার ইউনিয়ন কংগ্রেস নামে পরিচিত এই সম্মেলনে হিজরি ক্যালেন্ডার নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বিভক্তি সেটা নিরসনে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।সেখানে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই বিশ্বের মুসলিমদের একটি বর্ষপঞ্জীর মধ্যে নিয়ে আসার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। আর সেটি হলে রোজা যেমন একই দিন থেকে শুরু হতো তেমনি ঈদও একই দিন পালন করা সম্ভব হতো।

সূত্র-বিবিসি

Link copied!