Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শিশুশ্রমে ৭৭ হাজার শিক্ষার্থী

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ১৭, ২০২২, ০১:৪০ এএম


শিশুশ্রমে ৭৭ হাজার শিক্ষার্থী

করোনা মহামারির মধ্যে দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ ৮১ হাজার ৫৫ শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বাল্যবিয়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৪১৪ শিক্ষার্থীর। এসময় শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭০৬ জন। বাকি তিন লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন অন্যান্যভাবে ঝরে গেছে।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের জন্য দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২০ হাজার ২৯৪টি। সেই হিসাবে তথ্য পাঠায়নি আট হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ হাজার ৬৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে বালক ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৬ জন এবং বালিকা ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯১ জন।

২০২১ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে বালক ৩০ লাখ ২১ হাজার ২৩৩ জন এবং বালিকা ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ৩০৫ জন। প্রাপ্ত তথ্যে কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় মোট শিক্ষার্থী বেড়েছে ৯৩ হাজার দুই জন।

এতে বলা হয়, ২০২১ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৬১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৩ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে বালক ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ৭৯১ জন এবং বালিকা ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৯২ জন। পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, বাল্যবিয়ের কারণে ৪৭ হাজার ৪১৪ জন পরীক্ষায় অনুপস্থিত, শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ৭৭ হাজার ৭০৬ জন এবং অন্যান্য কারণে অংশ নেয়নি তিন লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন শিক্ষার্থী। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৯টি অঞ্চলের মধ্যে পরীক্ষা অনুপস্থিতির হার সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও বরিশালে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। শিশুশ্রমের কারণে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির হার সর্বোচ্চ রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন চট্টগ্রামে ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শিশুশ্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীও রাজশাহী অঞ্চলে বেশি।

এ কারণে এই অঞ্চলে প্রায় ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে কয়েক দফায় সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, করোনায় যেসব ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে তাদের উপবৃত্তির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। উপবৃত্তির অর্থ ও পরিমাণ বাড়িয়ে শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়া ছাত্রদের এর  আওতায় আনতে হবে। ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরকারের সঙ্গে নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসারও সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনার রোগী শনাক্ত হলে ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়। একটানা প্রায় ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সশরীর ক্লাস শুরু করা হয়।

Link copied!