Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বিএনপিতে আসছে বড় রদবদল

আবদুর রহিম

মার্চ ২১, ২০২৪, ১১:২০ পিএম


বিএনপিতে আসছে বড় রদবদল

অস্থায়ী মহাসচিবে সর্বাধিক আলোচনায় কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ এছাড়া মির্জা আব্বাস ও সালাউদ্দিনের নামও রয়েছে  

স্থায়ী কমিটিতে আলোচনায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু আরিফুল হক চৌধুরী, মো. শাহজাহান, মজিবুর রহমান সারোয়ার জয়নুল আবেদীন মিজানুর রহমান মিনু, আসাদুজ্জামান রিপন, জয়নুল আবেদিন ফারুক  ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন

দলের পুনর্গঠন কাজ চলমান, যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে
—গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

যে কোনো সময় নেতৃত্বের পরিবর্তন আসছে বিএনপিতে। দলটির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও বড় রদবদল নিয়ে আসা হচ্ছে। বিশ্বস্ত নেতারা বলছেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই অসুস্থ, বিছানায় পড়ে ছিলেন আন্দোলনের সময়ে। শীর্ষদের বড় অংশ আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় আন্দোলনও ম্লান হয়ে যায়। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ বহুদিন শূন্য। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে ১৯ পদের মধ্যে এখনো পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর নেতৃত্বের দুর্বলতা এসেছে প্রকাশ্যে। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ শীর্ষ নেতাদের জন্য সম্মানের পথ তৈরি করে ছাত্রদল-যুবদল করা, মাঠের পরীক্ষিত ত্যাগী এবং বিশ্বস্ত নেতাদের দিয়ে দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় কাউন্সিল না হলেও লন্ডন থেকে যে কোনো সময় ঘোষণা আসতে পারে। তবে অসুস্থ নেতাদের জন্য স্থায়ী কমিটির আদলে সম্মানস্বরূপ বিশেষ সম্মানের পথ তৈরি করা হবে। যাতে দলে কোনো ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি না হয়। দলের গঠনতন্ত্রেও এই পদের সুযোগ সৃষ্টি  হবে।  

মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটিতে কারা যুক্ত হচ্ছেন—  এ নিয়ে জানতে অন্তত এক ডজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের। তারা বলছেন, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আরও কয়েকজনকে যুক্ত করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিকল্প মহাসচিব কে হবেন এবং স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদ ও অসুস্থ নেতাদের বিকল্প কাদের নিয়ে আসা যায়—  এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গেও অনলাইনে পরামর্শ নিয়েছেন তারেক রহমান। আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির বড় তিন পদেও রদবদল আনা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা দুজন নির্ভরযোগ্য নেতা জানিয়েছেন, অস্থায়ী মহাসচিব হিসেবে বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদকে নিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কূটনীতি ও রাজনীতি দুই বিষয়ের মাপকাঠিতেই এই নেতার নাম এসেছে। 

বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্নেল অলি কখনো জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। প্রধানমন্ত্রী বানানোর প্রস্তাবসহ অন্তত চারবার বিশেষ প্রস্তাব পাওয়ার পরও জিয়া পরিবারের সঙ্গে তিনি ক্যু করেননি। ১৯৮৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত ২২ বছর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রথম ৪৪ ধারাও ভঙ্গ করেছেন তিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও কূটনৈতিক-রাজনৈতিক সব দিক থেকে ভারসাম্য অনুযায়ী বিএনপিতে মির্জা ফখরুলের পর কর্নেল অলির বিকল্প নেই— দলের বড় অংশ থেকে এমন প্রস্তাব ও পরামর্শ এসেছে। 

কর্নেল অলির সঙ্গে আরও দুজন আলোচনায় রয়েছেন। এর মধ্যে একজন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় এই নেতার গুরুত্ব থাকলেও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে দ্বিমুখী আলোচনা রয়েছে। অন্যজন ভারতে অবস্থান করা সাজাপ্রাপ্ত নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রায় ১০ বছর রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে থাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভূমিকা পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। 

এদিকে স্থায়ী কমিটিতে এবার তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে জোরালো আলোচনা চলছে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে,  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের আরেক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং মো. শাহজাহানের নামও আলোচনায় রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। বিদেশ থেকে এসে তিনি এখনো বিছানায়। মোশাররফের পারিবারিক সূত্র বলছে, চিকিৎসকদের ভাষ্য— তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে রাজপথের কর্মসূচিগুলোতে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত। এছাড়া আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। দলে এখন এই নেতারও কোনো ভূমিকা নেই। নব্বই-ঊর্ধ্ব জমির উদ্দিন সরকার সব সময় বৈঠকে থাকেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে এখন তিনি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও আন্দোলন সময়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিএনপির আন্দোলনে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। দলটির বড় অংশ থেকে অভিযোগ উঠেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তার বড় অংশই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন। সিনিয়র অনেকেই তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি। বিএনপির যে জনপ্রিয়তা ও সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল, তৃণমূলের ত্যাগ ছিল— তা কাজে লাগাতে পারেননি অনেক সিনিয়র নেতা। দ্বাদশে বিএনপির জয়ের জোয়ার উঠেছিল, মানুষ নদী সাঁতরেও শীতের সময় জনসভায় যোগ দিয়েছে। কূটনৈতিক বিষয়গুলো বিএনপির ঘরে ছিল; তবুও অজানা রহস্যে কোনো কিছুরই ফলাফল আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে বিএনপি। ওই বছরের আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করে দলটি। স্থায়ী কমিটিতে পদ রয়েছে ১৯টি। তখন থেকেই দুটি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এরপর এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা গেলে ছয়টি পদ শূন্য হয়। সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করায় শূন্যপদ দাঁড়ায় সাতটিতে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ জুন সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এখন পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আমার সংবাদকে  বলেন, ‘আমরা বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমাদের কাউন্সিল তো করতেই হবে। সময়-সুযোগ করে আমরা তা করব। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাউন্সিলের তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কে আসবে কে আসবে না, সেটা বলা মুশকিল। কাউন্সিল হলে কাউন্সিলররাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমার সংবাদকে বলেন, দলের পুনর্গঠন কাজ চলমান। যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আমার সংবাদকে বলেন, কাউন্সিল হলে সেখানে অবশ্যই নেতারা ভরসা রাখবেন। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে কাউন্সিল হবে কি না বলা দুষ্কর; এটা নিয়ে কিছু আলোচনা আছে। তবে কাউন্সিল না হলেও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেই ক্ষমতা দেয়া আছে, তিনি যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। 

দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের দলের অনেকগুলো শূন্যপদ রয়েছে। দীর্ঘদিন অনেকে অসুস্থ হয়ে বিছানায়। অনেকে নিয়মিত প্রোগ্রামে আসতে পারেন না। এসব দুদিন আগে হোক, দুদিন পরে হোক অবশ্যই পূরণ করতে হবে। শূন্য পদগুলো আমরা যত দ্রুত পূরণ করতে পারব, তত দ্রুতই আমাদের সাংগঠনিক কাজে গতি আসবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের দলের মহাসচিব বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তিনি বেশ কয়েকবার স্বেচ্ছায় চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনে থেকে গেছেন। এখনো তার বিকল্প দলে নেই। তবে চেয়ারপারসনই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি যে কোনো পরিবেশের আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এখন দল পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দু-তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে ১২-১৩ জন মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া ভালো। সেই পথে আমাদের চেয়ারম্যান শিগগিরই হাঁটবেন।
 

Link copied!