চাঁদাবাজি রোধে কঠোর সরকার

• চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের নির্দেশনা
• অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকার নির্দেশ
• রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে
• আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ছাত্র-জনতার অন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় হাসিনা সরকার। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সামগ্রিক সংস্কারের দিকে মনযোগ এই সরকারের। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও চাঁদাবাজি রোধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আসন্ন রমজান মাসে ভোক্তারা যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্থিতিশীল দামে ক্রয় করতে পারেন সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।  

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যে কোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন সতর্ক থাকতে হবে, যেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছি। এ বছর দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া যাবে না।’ তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে কোনো আক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের এ বিষয়ে খুবই স্বচ্ছ হতে হবে’।

প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে। সরাসরি থানায় না গিয়ে মানুষ যাতে অনলাইনে মামলা দায়ের করতে পারেন সে ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমানে নিকটস্থ কোনো থানায় গিয়ে এফআইআর দাখিল করতে হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং এর ফলে নানা ধরনের হয়রানির সুযোগ থাকে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পুলিশের একটি ডেডিকেটেড কল নম্বর সেট করা উচিত, যেমন-৯৯৯। যার মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থান থেকে অভিযোগকারী এফআইআর দায়ের করতে পারেন। তিনি বলেল, ‘এটি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ঝামেলা কমাবে।’ সভায় অধ্যাপক ইউনূস পুলিশ প্রধান বাহারুল আলমকে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এফআইআর  দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দেন।

পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি। আশা করি শিগগিরই সাড়া পাব।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’