Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫,

ইশরাক সমর্থকদের নগর ভবন ব্লকেড

নাগরিক ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মে ২০, ২০২৫, ১২:০৭ এএম


নাগরিক ভোগান্তি চরমে
  • গুলিস্তানে বন্ধ ছিল যান চলাচল যাত্রীদেরও ভোগান্তি 

ইশরাকের শপথ গ্রহণে ১০ বাধা— জানালেন সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন তার সমর্থকরা। এই কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের শপথ গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই নগর ভবন এলাকায় জড়ো হন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার লোকজন। 

বেলা ১১টার কর্মসূচির আগে থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে বঙ্গমার্কেট এলাকা ব্লকেড করেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে গোলাপ শাহ মাজারের রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে নগর ভবনের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। 

এদিকে নগর ভবনে ব্লকেড কর্মসূচির কারণে সংস্থাটির কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে গেছে। নগর ভবনের প্রতিটি ফটকে তারা তালা দিয়েছেন। সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবাগ্রহীতাদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারছেন না। এছাড়া নগর ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন নাগরিকরা। 

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, আমাদের ভোটের রায় হাসিনা ছিনিয়ে নিয়েছিল, আদালতের রায়ে আমাদের ভোটের মর্যাদা ফিরে পেয়েছি। ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার রায় আদালত দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনও গেজেট দিয়েছে। স্থানীয় সরকারের লোকজন তাকে দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। 

এই দাবিতে গতকাল পঞ্চম দিনের মতো নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইশরাকের সমর্থকরা। এর আগে গত শনি এবং রোববার সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন তারা। ডিএসসিসির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া হয়। এর মধ্যে অঞ্চল-১ এর (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট, শাহবাগ) আঞ্চলিক কার্যালয় নগর ভবনে অবস্থিত। 

গতকাল সকাল ১০টায় নগর ভবনের সামনে যান কলাবাগানের ডলফিন মোড়ের বাসিন্দা মকবুল হোসেন। নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা থাকায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। 

আলাপকালে মকবুল হোসেন বলেন, নগর ভবনের সামনে আন্দোলন চলে এটা জানতাম না। ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে নগর ভবনেই ঢুকতে পারিনি। মেয়র হওয়ার আগে যে ব্যক্তি এমন জনভোগান্তি সৃষ্টি করে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। 

গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে লালবাগের কেল্লার মোড়ে শতাধিক লেগুনা যাত্রী পরিবহন করে। কিন্তু ব্লকেড কর্মসূচির কারণে লেগুনাগুলো ফুলবাড়িয়া থেকেই ফিরে যাচ্ছে। এ পথের যাত্রীদের গুলিস্তান থেকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। 

গুলিস্তান থেকে হেঁটে চাঁনখারপুল যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ আন্দোলনের কারণে গুলিস্তানসহ আশপাশের সব সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ইশরাকের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা দরকার। 

টানা পঞ্চম দিনের এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারের সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইশরাক হোসেনকে ঢাকার মানুষ মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। কারণ ২০২০ সালে তাদের ভোটেই তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার স্থলে আরেকজনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এখন নির্বাচন কমিশন আগের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের শপথ পড়াতে কালক্ষেপণ করছেন। ঢাকাবাসীর দাবি দ্রুত ইশরাক হোসেনকে শপথ করানো হোক। অন্যথায় তাদের এই আন্দোলন লাগাতার চলবে। নাগরিক ভোগান্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মশিউর রহমান তা এড়িয়ে যান।

এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে ১০টি বাধার কথা উল্লেখ করেছেন। গতকাল তার ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ইস্যুতে একটি পোস্ট করেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, প্রথমত, আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় ভায়োলেট করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করেছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি। তৃতীয়ত, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলেও মতামত দেয়ার আগেই এবং একই সঙ্গে দুজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিস উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। চতুর্থত, উক্ত মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না এবং রায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনার উল্লেখ নেই। পঞ্চমত, শপথ না দেয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন। ষষ্ঠ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সংক্রান্ত মামলায়, আর্জি সংশোধন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে আমলে নিয়ে খারিজ করেছে ট্রাইব্যুনাল। ফলে ট্রাইব্যুনালের দ্বিমুখী অবস্থান বোধগম্য হচ্ছে না। সপ্তম, মেয়াদ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে; কতদিন মেয়র থাকবেন বা আদৌ মেয়াদ আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। অষ্টম, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে ‘কোনোপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ’-এর কথা বলা হয়েছে। 

স্পষ্টতই বিতর্কিত রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনা না থাকা, লিগ্যাল নোটিস এবং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে। নবম, এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। দশম, আওয়ামী আমলের অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেয়ার প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি স্বীকার করে যে আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলো বৈধ, তবে সরকারের জন্য এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না।

উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং উপরোল্লিখিত জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

এ সব জটিলতা নিরসন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যক্রমের কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না! আবার কেও বলবেন না যে এটা সাধারণ জনগণ করছে, কারণ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের নির্দেশনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মীরাই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

Link copied!