নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২৬, ২০২৫, ১২:১৩ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২৬, ২০২৫, ১২:১৩ এএম
সমঝোতায় সমাধান, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে এবি পাটি
দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেই সরকারকে যেতে হবে —জোনায়েদ সাকি
দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে বলেছি —নুর
নির্বাচন ৩০ জুনের ওই পারে যাবে না। এতে বিভিন্ন দলের নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল রোববার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, পার্টির লিডাররা ড. ইউনূসকে সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা যে সংস্কার করছি, আমরা যে বিচার কাজ শুরু করেছি, নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছি, সেটাতে তারা সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
শফিকুল আলম বলেন, আরও অনেকগুলো বিষয়ে কথা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে, সংস্কারের বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আবারও জানিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করবেন। ৩০ জুনের ওই পারে যাবে না। এতে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সমঝোতায় সমাধান, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে এবি পার্টি : সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতিকে এক অবস্থায় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক শেষে এ কথা বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেন, আমরা অনেকেই সেখানে মত প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যথাসম্ভব নির্বাচন আয়োজন করার জন্য। তবে সেটা চাপিয়ে দিয়ে নয়, তিনি তার সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন করবেন।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বলেছি, ছাত্রদের যে ঐক্যটা থাকা দরকার ছিল, জেনজি, মাদ্রাসার ছাত্র, পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র আন্দোলনে ছিল তাদের ঐক্যটা ধরে রাখা যায়নি। কখনো কখনো ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য উপদেষ্টারা কাজ করেছে। সব বিষয় বিশ্লেষণ করে স্থিতিশীল অবস্থা তৈরির কথা বলেছি। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদ যদি রিসাফল করতে হবে বলে মনে করেন, সেটা করতে বলেছি। আমরা মনে করি, ইগোর কারণে আজকের এ অবস্থা।
মঞ্জু বলেন, চারটা পক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রশাসনসহ পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। এখানে গ্যাপ পূরণ করতে সমঝোতামূলক পদক্ষেপ নিতে বলেছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আবেদন ছিল দায়িত্ব ছেড়ে দিলে, উপদেষ্টা পরিষদ পদত্যাগ করলে সেটাই যদি কল্যাণকর হতো তাহলে আমরা সেটাই বলতাম। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই। আপনি যে কাজগুলো এগিয়ে নিয়েছেন, এখন যদি পদত্যাগ করেন তাহলে নির্বাচন-সংস্কার সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আপনাকে থাকতে হবে, আপনি পদত্যাগের চিন্তা করতে পারবেন না। আপনার, আমার, আমাদের সবার পরাজয়ের সুযোগ নেই। আমাদের সফল হতেই হবে।
রোডম্যাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, স্থিতিশীল একটা অবস্থানে গেলে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। তবে উনি বলেছেন আমি কিন্তু নানা কারণে অত্যন্ত হতাশ। বৈঠকে সিনিয়র রাজনীতিবিদরা ছিলেন, তারা বলেছেন যে আপনি হতাশ হবেন না। আপনাদের যে সমস্যা-ত্রুটিগুলো আছে সেগুলো দূর করে এগিয়ে যান।
দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেই সরকারকে যেতে হবে —জোনায়েদ সাকি : গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে, তা সম্পূর্ণ করেই সরকারকে যেতে হবে। এর অন্যথায় কোনো সুযোগ নেই। গতকাল রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছে; একদিকে হত্যাকারীদের বিচার, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা...। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের যে আকাঙ্ক্ষা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ সত্যিকারের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। সেটি বাস্তবায়ন করার যে দায়িত্ব সরকার নিয়েছে, সে দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেই সরকারকে যেতে হবে। এর অন্যথায় কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে কথা বলার জন্য ডেকেছেন। সে বৈঠকে তিনি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। দুটি বিষয় তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, এই পরিস্থিতি এমন যে এখানে তার পক্ষে কাজ করার ক্ষেত্রে নানান অসুবিধার জায়গা তৈরি হচ্ছে। সেটা এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, তিনি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা সে নিয়েও তার মধ্যে একটা সংশয় তৈরি হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন কাজ যদি না করা যায় তাহলে দায়িত্বে থাকার প্রয়োজন নেই। ‘আর, দেশবাসীর প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলোসহ জনগণের ভরসার যে জায়গা আছে, সেটা উপলব্ধি করে তিনি সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে একটা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নানা ধরনের আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের বিদেশি সহযোগীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সবকিছুতে বাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। সেটা একটা আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। সেক্ষেত্রে তিনি সবার ঐক্যের কামনা করেছেন।
দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে বলেছি —নুর : ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টাকে অপসারণ করা বা তাদের বুঝিয়ে পদত্যাগের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে বলেছেন বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। গতকাল রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে যারা উপদেষ্টা রয়েছেন, তারা যেহেতু একটি দল করেছেন, বাইরে এ কথাটি প্রচলিত আছে যে, এই দলটি সরকারের সুবিধা পাচ্ছে এবং সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনসিপির দুজনকে অপসারণ করা বা তাদের বুঝিয়ে পদত্যাগের দিকে যাওয়া সরকারের দিক থেকে একটি ভালো দিক হবে।