Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

ঠাকুরগাঁওয়ে আশ্রয়ণের একঘরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৯ সদস্যের বসবাস

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০৩:১৮ পিএম


ঠাকুরগাঁওয়ে আশ্রয়ণের একঘরে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৯ সদস্যের বসবাস

মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে হারিয়েছেন ২৫ বছর আগে। তারপর থেকে একাই সংসার দেখাশোনা করেন মনোয়ারা বেগম। বর্তমান তার বয়স ৬৫ বছর। কিন্তু এখন শরীরে আগের মত শক্তি নেই। নানা অসুখ শরীরে বাসা বেঁধেছে।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মুসলিমনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা (বেসামরিক গেজেট নং-৪৭০, লাল মুক্তি-৩১০০১০৬৪৬) মৃত শাহজাহান আলীর সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম।

পরিবারের নয়জন সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না মনোয়ারা। সরকারের কাছে মনোয়ারার আবেদন, একটি বীর নিবাস মুক্তিযোদ্ধার ঘরের। তাহলে আমরা নয়জন সদস্যের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো।

বর্তমানে তারা সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুণাগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন। সংগ্রামী জীবন মনোয়ারা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়েছে তাকে।  

তিন সন্তান বড় হওয়ার আগেই স্বামী পৃথিবী ছেড়ে গেলে নয়জন সদস্যের পরিবারের পুরো দায়দায়িত্ব পরে মনোয়ারা বেগমের উপর। কোনরকম করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে চার বছর যেতে না যেতেই বড় মেয়ের স্বামী মারা যায়।  

মেয়ে আর নাতি চলে আসে আবার তার কাছে। ঋণের টাকায় ছেলেকে নিয়ে দিয়েছেন অটো আর ছোট মেয়ের বিয়ে হলেও মেনে নেয়নি শ্বশুর বাড়ির পরিবার। তিন সন্তান আর পাঁচ নাতনিসহ তাদের পরিবারের সদস্যর সংখ্যা নয়জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে কোনমত বসবাস করছেন তারা।

মনোয়ারা বেগমের বড় মেয়ে শামসুন্নাহার বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমাদের ঘর বাড়ি ছিল না। একটা সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের জায়গা হয় না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকি। অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজ করি। আমি নিজেও অনেকবার ভূমি অফিসে গেছি কোন লাভ হয় নাই। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আমার মাকে একটি মুক্তিযোদ্ধার ঘর তৈরি করে দেয়।

ছোট মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, আমি ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছি। অনেক জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছি অথচ হয়নি। আমাদের অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়। যদি একটা চাকরি পেতাম তাহলে হয়তো আর এত কষ্ট থাকত না।

মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী মনোয়ারা বেগম দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, “আমার স্বামীর বাড়ি ছিলেন ময়মনসিংহ। এদিকে যুদ্ধের সময় চলে আসি। বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে বলেন তার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে। তারপর আমি সেটা সংগ্রহ করি। কয়েক বছর পর তিনিও মারা যান৷ পরে অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছি৷ যা ভাতা পাই তা ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। সব মুক্তিযোদ্ধা বীর নিবাস পেল আমরা পেলাম না। একটা ঘরে ৯ জন সদস্য নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়৷ এখানে এতজন আমরা থাকতে পারি না। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ভালো একটি ঘর দেওয়া হয়। যেখানে আমার পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারব। তাহলে মরেও শান্তি পাব আমি।”

ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান বলেন, বীর নিবাস সব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। যাদের জমি নেই তারা যদি খাস জমির জন্য ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তাহলে এটি সমাধান হবে বলে আশা করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বীর নিবাসের প্রথম শর্ত হলো চার শতক জমি থাকতে হবে। নিজস্ব জমি না থাকলে এখন পর্যন্ত ঘর দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। যদি উনার মেয়ে বিধবা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আবেদন করলে আমরা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য বিবেচনা করব। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনরকমে তারা জমি কিনে বীর নিবাসটি নিতে পারেন৷ তারপরেও আমাদের উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবেন।

এসএম

Link copied!