Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪,

জাল ভিসা নিয়ে বিমানবন্দরে ধরা, দালালের বাড়িতে ছয় যুবক

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

মার্চ ৩০, ২০২৪, ০২:০২ পিএম


জাল ভিসা নিয়ে বিমানবন্দরে ধরা, দালালের বাড়িতে ছয় যুবক
ছবি: আমার সংবাদ

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ছয়জন যুবক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাল ভিসা নিয়ে ধরা খেয়ে দালালের বাড়িতে এসে সাতদিন ধরে অবস্থান করছেন। টাকা ফেরত নিয়ে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে চান। তা না হলে দালালের বাড়িতেই তারা সবাই শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মাহুতি করবেন বলে জানান।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছয় যুবক দালালের বাড়িতে অবস্থান করছেন। দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকেরা হলেন- উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার।

জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। এলাকায় তাকে মাবুদ নামে চেনেন। সাড়ে তিন বছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রামের ছয়জন যুবক একসঙ্গে মালয়েশিয়াতে যাওয়ার জন্য দালাল মাবুদের সঙ্গে ৩৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধও করেছেন। ছয় মাস আগে তাদের মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্তানে পাঠানোর কথা হয়। তাতেও রাজি হন ওই যুবকেরা। অনেক দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে ঢাকায়। এয়ারপোর্টে চেকিংয়ের সময় জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্টকার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধুমাত্র বিমানের টিকিট ছিল আসল। এয়ারপোর্ট থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এখানেই শেষ নয়, গত ছয় মাস আগে একই উপজেলার আতাহার গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, জিন্দাপুর গ্রামের মোশারফের ছেলে মোহসিন আলী, বেলগড়িয়া গ্রামের ফরিদুলের ছেলে ফয়সাল, মহেশপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে রিমন, পাঁচগ্রামের মৃত মজিদের ছেলে মোস্তফাসহ অনেককেই মালয়েশিয়াতে একই কৌশলে পাঠিয়েছে দালাল মাবুদ। তারা বর্তমানে কাজ না পেয়ে বন্দি অবস্থায় মালয়েশিয়াতে জীবনযাপন করছেন।

দালাল মাবুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন যুবক বাড়ির ভেতরে লাগেজ নিয়ে অবস্থান করছেন। সব ঘরের দরজাই বন্ধ। বাড়িতে দালাল মাবুদের বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড়ভাই আব্দুস সোবহান রয়েছেন। তবে দালাল সুলতান মাহমুদ নেই।

এ সময় যুবকেরা বলেন, আমরা সবাই নিঃস্ব। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এসে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। বুধবার দিবাগত রাতে মাবুদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছে। তারা সমাধানের জন্য মাবুদের বাড়িতে বৈঠকেও বসেছিলেন কিন্তু মাবুদ বৈঠকের অবস্থার বেগতিক বুঝে পালিয়ে যান।

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয় দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি।

আরেক যুবক আবু তাহের বলেন, মালয়েশিয়াতে যাওয়া হয়নি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাজিকিস্তানে যাওয়ার দিনে কেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদের ফাঁসানো হলো। আমরা আর বিদেশে যাব না, টাকা ফেরত চাই।

জিন্দারপুর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ঐ গ্রামের বাসিন্দা রাজা মিয়া বলেন, এ বিষয়ে সব কিছুই জানি। মাবুদ ধোঁকাবাজ। যারা আজ অবস্থান করছেন তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের ছেলে।

দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেন, আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাঠাচ্ছি মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে। তারা যে ভুয়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই জানি না। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের কাছে সময় চেয়েছি।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে থানায় ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এআরএস

Link copied!