মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
মে ১৫, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
মিরাজ আহমেদ, মাগুরা
মে ১৫, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
মাগুরার নবগঙ্গা নদীসহ জেলার আরও সাতটি নদী বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এক সময় এই নদীগুলো ছিল কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশগত ভারসাম্যের মূল বাহক। বর্তমানে সেগুলো পরিণত হয়েছে বদ্ধ জলাশয়ে।
নদীর উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অব্যবস্থাপনা, দখলদারিত্ব ও দূষণের কারণে নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে।
নাব্যতা নেই, পানিশূন্য নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে নবগঙ্গা নদীতে পানি থাকেই না। ফলে কৃষকরা নদীর বুক চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে নদীর অস্তিত্ব আরও সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়েছে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।
দখল ও দূষণের করাল ছায়ায় নদীর দুই পাড়জুড়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা, দোকানপাট, পাকা স্থাপনাসহ নানা অবৈধ নির্মাণ। জেলার চারটি প্রধান নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলের শিকার হয়েছে নবগঙ্গা নদী—প্রায় ৫৫৮টি স্থানে রয়েছে অবৈধ দখল। পাশাপাশি শহরের ময়লা, ড্রেনের পানি ও কসাইখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার ফলে নদীর পানি হয়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণঘাতী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যার আওতায় ১১ কিলোমিটার নদী খনন, ৮টি গোসলঘাট নির্মাণ ও রেগুলেটর সংস্কারের কথা ছিল।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকেছে। নদীর নাব্যতা ফিরে আসেনি; বরং খননের নামে অর্থের অপচয় হয়েছে।
আলোকদিয়ার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, “কার্যকর পদক্ষেপ এখনই দরকার। নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী ও পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা বাস্তবসম্মত খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ চান। যদি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায়, তবে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি হবে এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে।”
পারনান্দয়ালী এলাকার বাসিন্দা গোলাম কবির বলেন, “শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, তার বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টেকসই পদক্ষেপ না নিলে নবগঙ্গার মতো নদীগুলো একে একে হারিয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, “২০১৭-১৮ অর্থবছরের পর থেকে আর কোনো প্রকল্প হয়নি। নদীর দুই পাড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই অভিযান চালানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী রক্ষায় আইন বাস্তবায়নে কঠোরতা প্রয়োজন। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু পাঠ্যবইয়ে নবগঙ্গা নদীর নাম পড়েই চিনবে।”
ইএইচ