Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫,

কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে শালিখার মৃৎশিল্প

শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি:

শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি:

মে ১৬, ২০২৫, ১২:৪০ পিএম


কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে শালিখার মৃৎশিল্প

এক সময় গ্রামের ঘরে ঘরে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কলস, সরা, পুতুল আর খেলনার ছড়াছড়ি ছিল। এখন সবই ইতিহাস। প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের দাপটে মৃৎশিল্পে নেমেছে ঘোর দুর্দিন।

মাগুরার শালিখা উপজেলার দরিশলাই, হরিশপুর, ছান্দড়া, গোবরা, শতপাড়া, গঙ্গারাপুর ও কেচুয়াডুবী গ্রামের পালপাড়াগুলোতে আজও টিকে আছেন হাতে গোনা কিছু মৃৎশিল্পী। ভাঁড়, কুয়োর রিং আর পায়খানার স্লাব তৈরির ক্ষীণ চাহিদাই এখন তাঁদের শেষ ভরসা।

দরিশলাই গ্রামের পালপাড়ায় শতাধিক পরিবার বাস করলেও এখন ৩০ থেকে ৪০টি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বাকিরা পেশা বদলেছেন। সুবাস কুমার পাল বলেন, ‘আগে মাটি পাওয়া যেত বিনা পয়সায়, এখন কিনে আনতে হয়। কাঠের দামও বেড়েছে। লাভ নেই বললেই চলে।’

একই গ্রামের নির্মল পাল বলেন, ‘মৃৎশিল্পে এখন আর আগের মতো চাহিদা নেই। তাই আমি মণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ করি।’
হরিশপুর গ্রামের সুখদেব কুমার বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা চালু হওয়ার পর থেকেই শুধু চাড়ি আর রিং বানিয়ে সংসার চালাচ্ছি।’

এক সময় গ্রামের মেলায় মাটির হাতি, ঘোড়া, পুতুল—শিশুদের পছন্দের খেলনা ছিল এগুলো। দামে সস্তা ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ছিল বাড়তি কদরও। কিন্তু এখন সেসবের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিকের চকচকে পণ্য।

শালিখা উপজেলার আরেক মৃৎশিল্পী রণজিৎ পাল বলেন, ‘কোথায় সেই কদর? এখন বাসন বানালে কিনেই না কেউ। শুধু দইয়ের জন্য ভাঁড় আর পায়খানার রিং বানিয়েই টিকে আছি।’

শ্রী ইন্দ্রনীল অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান সংগঠক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘মৃৎশিল্প শুধু একটি পেশা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও পরিবেশবান্ধব জীবনের প্রতিচ্ছবি। প্লাস্টিক-অ্যালুমিনিয়ামের দাপট ঠেকাতে এই শিল্পকে আবার জাগিয়ে তোলা জরুরি। সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, তবে এ শিল্প একদিন ইতিহাসে বিলীন হবে।’

সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, মৃৎশিল্পের বাজার সম্প্রসারণ, পরিবেশবান্ধব উপকরণ হিসেবে প্রচার, স্বল্প সুদে ঋণ এবং মেলা ও প্রদর্শনী আয়োজনের মতো কার্যকর পদক্ষেপই পারে এই শিল্পকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে। না হলে, গ্রামীণ শিল্প-সংস্কৃতির এই স্বর্ণ অধ্যায় হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে।

বিআরইউ

Link copied!