Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪,

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সবার সামনেই নদীতে লাফ দেয় ইরফান, বাঁচাতে আসেনি কেউ

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া

আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৬:০১ পিএম


সবার সামনেই নদীতে লাফ দেয় ইরফান, বাঁচাতে আসেনি কেউ

মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের কুচিং শহরে অবস্থিত সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইরফান সাদিক গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম দিকে ইরফান মানসিকচাপে আত্মহত্যা করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। তবে মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে ইরফান সহপাঠীদের র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। 

এদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকা এবং যথাযথ তদন্ত না করে মরদেহ দেশে পাঠানোয় প্রশ্ন তুলেছে ইরফানের পরিবার। ইরফানের মৃত্যুর পরবর্তী সময় দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে পরিবার প্রশ্ন তুলার পর কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) সূফী আবদুলাহিল মারুফ প্রেস বিজ্ঞপ্তির দেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ইরফানের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকাল মৃত্যুতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর  সমবেদনা জ্ঞাপন করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী ইরফানের মৃত্যুর খবর  হাইকমিশনের গোচরীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার কাউন্সেলর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা তিনঘণ্টা বিমান ভ্রমণ করে পরদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ইতোমধ্যে মৃত শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে, বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার সহায়তায়, লিখিতভাবে লাশ পোস্টমর্টেম এবং পরবর্তী তদন্ত না করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মৃত ইরফান এর পিতার  স্বাক্ষরে আবেদন করা হয়। তাছাড়া তার বোন ইমেইলে সরাসরি হাইকমিশনার বরাবর একই অনুরোধ করেন।

পাশাপাশি, দ্রুত সময়ের মধ্যে লাশ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দেশ-বিদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ অনেকের ফোন আসতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে, প্রেরিত কর্মকর্তা শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার স্থান পরিদর্শন করেন এবং তিন দিন অবস্থান করে সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পুলিশ ও এয়ারলাইন্সের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেন। পরিবার সদস্যদের আবেগ এবং লিখিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ পোস্টমর্টেম না করে লাশ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় এবং যথারীতি  মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য টিকিট করাসহ সমস্ত আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। মরদেহ দেশে প্রেরণের নিমিত্তে সকল দাপ্তরিক ও বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক জটিল প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে মৃত্যুর ঘটনাকে তদন্ত  করে দেখার কথা বলা হয়।

তবে; ইতোমধ্যে লাশ প্রেরণের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ায় লাশ বিমান থেকে ফেরত আনা ও পোস্টমর্টেম করার মত কোন সুযোগ ছিল না।

উল্লেখ্য, এমন পরিস্থিতিতে পরিবারকে প্রয়োজনে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর লাশ পোস্টমর্টেম করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মৌখিকভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা যাবে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,  শিক্ষার্থী ইরফান গত কয়েক মাস ধরে বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে জানা যায়। সে পরিবারকে এর আগেও তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে, এমনকি সুইসাইড করবে বলে তার মাকে জানায়। তার এমন অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে  পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত ছিলেন বলে জানা যায়। তবে কেউই তাকে এই মানসিক অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, যা খুবই দুঃখজনক।

হাইকমিশনের সংগৃহীত ভিডিওতে দেখা যায় যে,  শিক্ষার্থী ইরফান ঘটনাস্থলে মসজিদের বেলকনি থেকে নদীতে লাফ দেয় । সেখানে বহু মানুষ, এমনকি সারওয়াক স্টেটের পুলিশও উপস্থিত ছিলেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি কেউ তাকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

এআরএস

Link copied!