ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

শিক্ষার হার বাড়লেই কি দেশ এগিয়ে যাবে?

মো. তানজিমুল ইসলাম

মো. তানজিমুল ইসলাম

জুন ৮, ২০২৩, ১২:৪২ পিএম

শিক্ষার হার বাড়লেই কি দেশ এগিয়ে যাবে?

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি জনবহুল দেশের নাম বাংলাদেশ। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে কিভাবে এর জন্ম হলো এটি কম বেশি সকলেরই জানা। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষুধা-দারিদ্র-অর্থনীতিতে জর্জরিত এই দেশে ১৯৭১ সাক্ষরতার হারছিল ১৬.৮ শতাংশ, ১৯৭৪ সালে সাক্ষরতার হার দাঁড়ায় ২৫.৯ শতাংশ।

১৯৯১ ও ২০০১ সালে সেই হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৫.৩ শতাংশ ও ৪৭.৯ শতাংশ এবং বর্তমানে এই হার প্রায় ৭৫ শতাংশ। তার মানে ক্রমান্বয়ে এই হার খুব সন্তোষজনক ভাবে বেড়েছে, এটি সত্য! এটা প্রমাণ করে এই দেশ অনেকখানি এগিয়েছে বা এগিয়ে চলেছে! একই সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হারটিও মনের মধ্যে অনেক আশা যোগায়! 

তবে প্রশ্ন হচ্ছে প্রতি বছর এত এত শিক্ষিতের হার বেড়ে আসলে কি লাভ? জাতীয় উন্নয়নে আদৌ কি কোনো প্রভাব ফেলছে?

প্রিয় পাঠক এবং সকল সুধীজনের কাছে একটি জিজ্ঞাসা,কেন আসলে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি? শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্য কী? কেন আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ? আদৌ কি গণহারে সবার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ? আমরা নিশ্চয়ই জানি, সাধারণত: শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ করে, সমাদৃতকরে, মানুষের মধ্যে চেতনাবোধকে সুচারুরুপে জাগ্রত করে। 

শিক্ষা মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, মানবিক ও সৃজনশীল করে গড়ে তোলে। কিন্তু একথা কি আদৌ সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে? যে দেশে এত এত শিক্ষিত মানুষের বসবাস সে দেশে কেন এত অমানবিক, অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্ম নেয়?

পক্ষান্তরে, অনেক বিখ্যাত মানুষের জ্বলন্ত উদাহরণ রয়েছে, যাঁরা জীবনে কোনোদিনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি, কিন্তু বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী হিসেবে সমাজে সমাদৃত হয়েছেন, মৃত্যুর পরেও গণমানুষের মণিকোঠায় সম্মানের পাত্র হিসেবে বিশেষ অবস্থান করে নিয়েছেন। তবে কি আমরা বলতে পারি যে, স্বশিক্ষাই আসলে এর মূল কথা! 

শুধুমাত্র পাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ডিগ্রী অর্জন করলেই যে একজন মানুষের ভেতরের ভালো ভাবনাগুলো জাগ্রত হবে, সেটা মোটেই ঠিক নয়। প্রতি বছর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী কৃতিত্বের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভারী ভারী ডিগ্রী অর্জন করছে! প্রায় প্রতিটি পরিবারেই নিদেন পক্ষে অল্প শিক্ষিত মা-বাবার সন্তানেরাও অনেক ভালো রেজাল্ট নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ অর্জন  করছে! 

যেটি শুনতে বা বলতে বেশ ভালো লাগে! এজন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও আদৌ কি খুব লাভ হচ্ছে?

পৃথিবীর অনেক দেশের শিক্ষার হার বাংলাদেশের চেয়েও কম সত্ত্বেও জাতীয় অর্থনীতিতে তারা অনেক এগিয়ে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার শিক্ষার হার যেখানে শতকরা ৬৫ ও ৪০ ভাগ সেখানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বর্তমানে প্রায় ৭৫ ভাগ! শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ফলাফলের দিকে তাকালে অনেককে আমাদের কেবল তৃপ্তির ঢেঁকুরই গিলতে হবে! 

বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় এ দেশে কেবল বেকারত্বের হারই বাড়ছে না বরং একটা বৃহৎ অংশ অর্থাৎ যুব সম্প্রদায় অভিশপ্ত জীবন যাপন করছে! সরকারের পক্ষে এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেই বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহ নির্লিপ্ত উদাসীনতায় এই শিক্ষিত বেকার সমাজের সাথে ন্যুনতম বেতনে কাজে নিযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের সাথে যেন ঠাট্টা মশকরাই করছে হরহামেশাই! 

এ দেশে সামান্য আট হাজার টাকা বেতনের একটি চাকুরি পাবার অনেক আশা নিয়ে থাকে; অনেকে আবার ব্যর্থ হয়ে হতাশার চাদর গায়ে জড়িয়ে বুঁদ হয়ে থাকে! পক্ষান্তরে একজন রিকশা চালক, অটো চালক, সবজী বিক্রেতা যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিই নেই তারা প্রাত্যহিক কমপক্ষে এক হাজার টাকার উপার্জন করতে সক্ষম হয়! 

অর্থাৎ মাস শেষে ত্রিশ হাজার টাকায় তারা মোটামুটি সংসার চালায়! পক্ষান্তরে ত্রিশোর্ধ অনেক  স্নাতক ডিগ্রীধারী বেকার যুবক বিয়ের পিঁড়িতে বসতেও ভয় পায়! হতাশা, লজ্জা, ঘৃনা, অপমানে জর্জরিত এই শ্রেণীর খবর কেউ রাখে না! শিক্ষিতের তকমা গায়ে লাগিয়ে আত্নসম্মান নিয়ে বাঁচতে তারা বেজায় হিমশিম খাচ্ছে! 

ফলশ্রুতিতে শিক্ষিতদের মধ্যে থেকে প্রকৃত সৃজনশীল প্রতিভাধর মানুষ তৈরি হচ্ছে খুবকম! সীমিত সম্পদ আর সীমাহীন দূর্ভোগকে সাথে নিয়ে তারা দূর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছে এই অভিশপ্ত জীবনে। জীবনে অর্জিত শিক্ষা যেন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে, এমনি করেই সৃজনশীলতাও উন্মুক্ত চিন্তার প্রায়োগিক কোনো  পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে না। কোন এক সময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত এই শ্রেণীটি অর্থ-বিত্তশালী, ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হতে শিক্ষিত মানুষদের স্বকীয়তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে!  শিক্ষিত মানুষদের আর কোনো অহমবোধও থাকবে না এক সময়!

বর্তমানে যে দেশে অল্প পরিশ্রমে বা বিনা পরিশ্রমে শত ভাগ শিক্ষার্থীকে পাশের সনদ দেয়া হয়, সে দেশে যে জ্যামিতিক হারে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়বে, এতে অবাক হবার কোনো কারণ নেই!এ মুহুর্তে শিক্ষানিয়ে গবেষণা হওয়া খুবই জরুরী! শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ডই হয়ে থাকে, তবে তাকে নিয়ে আর অবহেলা করার অবকাশনেই। 

আমরা প্রত্যেকেই জানি, একটি জাতি শিক্ষায় যতউন্নত, সে জাতির উন্নতির মাত্রাও ততবেশি! আসলেই কি তাই? দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস না করে, তাদের সঠিকভাবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিদায় দেবার সময় এসে গেছে! জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসারতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবী!

এক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাশাপাশি পিতামাতা ও নাগরিক সমাজ ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়িয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর গেলার সময় ফুরিয়ে গেছে! জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষিত সমাজকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতেপ্রয়োজনএকটিসম্মিলিতপ্রয়াস।

বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি শ্রেণীতে সৃজণশীল পাঠ্যসূচি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্যবইয়ের বাইরেও উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন হিসেবে তৈরি করতেই এই পদ্ধতি চালু হলেও বাস্তব চিত্র খুবই শোচনীয়! একজন শিক্ষার্থীকে চিন্তাশীল করে গড়ে তোলা যার দায়িত্ব, সেই শিক্ষকগণই আসলে কতটুকু সৃজণশীল? 

কতটুকু প্রগতিশীল চিন্তার চাষাবাদ হচ্ছে তাদের দ্বারা? এছাড়া,পাঠ্যবইয়ের বাইরেও যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আরো উপাদান রয়েছে, তা অনেক ছাত্র চিন্তা পর্যবন্ত করতে পারে না! ফলশ্রুতিতে তাদের প্রকৃত সৃজনশীল মানুষ তৈরির বিষয়টি মুখ্য না হয়ে গৌণ হয়ে পড়ছে। আর এভাবেই উন্মুক্ত ও উদার চিন্তাধারা না থাকায় একধরনের আজগুবি চিন্তাধারার যান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠছে!

উন্নয়নশীল এই দেশে যে যেভাবে পারছে,অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত সবাই! বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মতো স্বনামধন্য শিক্ষকমন্ডলীগণও বসে নেই এই প্রতিযোগিতায়! প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন সিলেবাস প্রণয়ন করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি অহেতুক আতঙ্কিত পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে! 

ফলশ্রুতিতে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের প্রসারতা বাড়ছে হু হু করে! দিনের পরে দিন সরকারি স্কুলগুলোতে নানান অজুহাতে ছুটি থাকলেও দুরন্ত গতিতে চলছে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারগুলো! শিশু সুরক্ষা, শিশু নিরাপত্তার বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করেই প্রচন্ড গরমে ছোট্ট একটি ঘরে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নামে রীতিমতো শাস্তি দেয়া হচ্ছে। 

আর এসবে মদত দিচ্ছে স্বয়ং মা-বাবা! এমন জঘন্য প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা গোল্ডেন এ প্লাস পেলেও প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল নাগরিক হতে ব্যর্থ হয়! উন্নয়নের অংশ হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তির যতপ্রসার ঘটছে, বৈষম্য ওযেন বাড়ছে তত! চাহিদার তুলনায় শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতের হার বাড়ার ফলে, এদেশে যেমন বেকারত্বেরহার বেড়েছে, অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত বাজারনীতির ফলে বেড়েছে উচ্চমূল্য স্ফীতি! 

যা একটি ভয়ঙ্কর বিষয়! বর্তমানে এদেশেরদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা বিপাকে পড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই চিন্তিত! এ মুহুর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবিকার সংকট।এইসংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিতের হার না বাড়িয়ে বরং দক্ষ শ্রমিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসারতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে এক্ষুণি! কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়ার কারণে অর্থনীতিতে জীবিকার সংকট তৈরি হচ্ছে। শ্রমেরবাজারে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে বেসরকারি খাতে নতুন কোনো কর্মসংস্থান হয়নি বললেই চলে।

সরকারিখাতে ও খুবই কমচাকরির সংস্থান হয়েছে। গবেষণা মতে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৬ থেকে ২৭লাখ লোক নতুন করে শ্রমের বাজারে আসে। এই হিসাবে গত দুই বছরে এসেছে ৫২ থেকে ৫৪ লাখ লোক। এদের বেশিরভাগেরই কর্মসংস্থান হয়নি।

সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল ২০১৭ সালে ঐ জরিপ অনুযায়ী মোট শ্রমশক্তির মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬কোটি ৮লাখ নারী-পুরুষ।বাকি২৭লাখবেকার।২০২৩সালেওকর্মসংস্থানকরাইহবেবড়চ্যালেঞ্জ।পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মোটকর্মসংস্থানে সরকারি চাকরিতে ৩দশমিক ৮শতাংশ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপে দেখাযায়, দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩৪শতাংশ, আর স্নাতক পর্যায়ে এইহার ৩৭শতাংশ। 

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১০বছরে কোন শিল্পখাতে কেমন কর্মী দরকার হবে এবং কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন পড়বে—এই প্রজেকশন না থাকলে, শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী জোগান দেওয়া সম্ভব হবেনা। 

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে, কিন্তু চাহিদা মতো কর্মী তৈরিকরা সম্ভব হবেনা। আর তাই আপনাদের কাছে প্রশ্ন শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার বাড়লেই কি দেশ এগিয়ে যাবে? নাকি সুশিক্ষা ও স্বশিক্ষার প্রসার ঘটানোর সময় এক্ষুণি!

লেখক: কো-অর্ডিনেটর, অ্যাডভোকেসি এন্ড সোশ্যাল একাউন্টিবিলিটি
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

Link copied!