এস এম জহিরুল ইসলাম
আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি এক নিত্য ভয়াবহহ বাস্তবতা।
সম্প্রতি গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, দেশে সাংবাদিকতা আজ প্রাণঘাতী ঝুঁকির পেশায় পরিণত হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় অন্তত ছয়জন সাংবাদিক নিহত হলেও, সেই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার এখনো অনিশ্চিত। বরং ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী অংশ সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশ রোধে কাজ করছে—এটাই আজকের বাস্তবতা।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন “মিডিয়া স্বাধীনতার” প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়েছে।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জটিলতা, এমনকি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের মতো ঘটনা বাড়ছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ অন্তত ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে—যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এক ভয়াবহ সতর্কবার্তা।
এই পরিস্থিতিতে অনেক সাংবাদিকই জানাচ্ছেন, তারা “আতঙ্কে” কাজ করছেন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা বা গুগল রিভিউ নয়, প্রয়োজন কার্যকর সংস্কার ও শক্তিশালী পদক্ষেপ।
প্রস্তাবনা ও আহ্বান
১. সাংবাদিক নিরাপত্তা আইনের সংস্কার – নির্দোষ সাংবাদিকদের পুলিশি সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. রিপোর্টিং ইনসিডেন্ট ট্রাইব্যুনাল গঠন – নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
৩. প্রেস অ্যাক্রেডিটেশনে স্বচ্ছতা–সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের স্বেচ্ছাচারী বাতিল রোধ করে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৪. আইন ও শাসনের দুর্বলতা দূরীকরণ–ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ বিস্তৃত ও অস্পষ্ট আইন সংশোধন, যা সাংবাদিকদের অনুসন্ধানমূলক কাজকে বাধাগ্রস্ত করে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা শুধু পেশাগত অধিকার নয়—এটি গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য অপরিহার্য। তাই সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে সত্য প্রকাশের পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে যাবে, আর জনস্বার্থের পক্ষে কলম ধরা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
লেখক: সংবাদকর্মী, গাজীপুর
ইএইচ