Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মার্চ ২৮, ২০২৪, ১২:৩০ এএম


মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন

সারা দেশেই বাড়ছে মশার উপদ্রব। মশার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বাসাবাড়ি থেকে দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সব জায়গায়ই মশার দৌরাত্ম্য। মশা থেকে বাঁচতে মানুষ দিন-রাত কয়েল জ্বালিয়ে, ওষুধ ছিটিয়ে, মশারি টাঙিয়েও যেন নিস্তার পাচ্ছে না। বিগত বছরগুলোতে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেশি দেখা গেলেও চলতি বছর রাজধানীর বাইরেও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের সব জেলায় মশার উপদ্রব বাড়ছে। মশার এমন উপদ্রবে এর মধ্যে রাজধানীসহ দেশের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আতঙ্ক।

মশকনিধন বাবদ স্থানীয় সরকার বিভাগ শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও মশা কমার বিপরীতে বাড়ছে। শুধু গত তিন মাসে ঢাকায় মশা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনে। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা জায়েদা ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ বসবাস করি প্রায় ১০ বছরের বেশি সময়। এত মশা এর আগে কখনো দেখিনি। মশার কারণে দিনের বেলা দরজা জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়। কয়েল ব্যবহার করেও মশা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ছয় বছরের বেশি সময় বসবাস করেন আনিস আহমেদ। তিনি বলেন, উত্তরায় মশা সব সময়ই বেশি। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনও নিয়মিত মশার ওষুধ দিতে আসে না। সন্ধ্যা হলে বাইরে কোথাও চলাফেরা করা যায় না। 

ছেলেমেয়েরা মশারি ভেতরে পড়াশোনা করে। সমপ্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশজুড়ে এখন যেসব মশা দেখা যাচ্ছে। তার বেশির ভাগই কিউলেক্স প্রজাতির মশা। কীটতত্ত্ববিদের মতে, কিউলেক্স মশা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসব মশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শীতের শেষ দিকে ও গরমের শুরুর মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এ প্রজাতির মশা। সাধারণত বিভিন্ন ডোবা-নালা, ড্রেন, ঝিল বা খালের দূষিত পানিতে কিউলেক্স মশার প্রজনন বেশি হয়। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ ও জাপানি এনসেফালাইটিস হয়। যদিও এ দুটি রোগ বাংলাদেশে প্রকট নয়। তবে কিউলেক্স মশার কামড়ে জায়গায় নখের আঁচড়ে প্রুরিগো সিমপ্লেক্স নামের অ্যালার্জিজনিত রোগ হয়। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা।

এদিকে দেশে মশাবাহিত রোগ বেড়েই চলছে। গত বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে এখনো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। আর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে। ডেঙ্গুর আগাম সতর্কতা হিসাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। মশার এমন উপদ্রবের জন্য জনস্বাস্থ্যবিদরা দায়ী করছেন মশকনিধনে স্থানীয় সরকারের ব্যর্থতা আর অপরিকল্পিত মশকনিধন কার্যক্রম। মশার উপদ্রব নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, দেশে কিউলেক্স মশার আধিক্য বেশি দেখা যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সাধারণত আমাদের দেশে মশা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চলতি বছর বর্ষার আগেই মশা বেশি দেখা যাচ্ছে। আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে মশকনিধন পদ্ধতি জোরদার করতে হবে। 

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে রেকর্ড আক্রান্ত ও মৃত্যু হলো। এ বছর মশার পরিমাণ আরও বেড়েছে। আমাদের মশকনিধন পদ্ধতি খুব বেশি একটা কাজে আসছে না। সঠিক কর্ম পরিকল্পনা সাজিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মশকনিধনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। 
 

Link copied!