Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

আনসার সদস্যকে হত্যা, ২২ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০২:৩৮ পিএম


আনসার সদস্যকে হত্যা, ২২ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

বিগত ২০০২ সালে কর্তব্যরত আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ও পুলিশ সদস্যকে হত্যাচেষ্টার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সন্ত্রাসী শুক্কুর আলী ওরফে সোহেল ওরফে সোহাগকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০০২ সালের ১২ মার্চ রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে কর্তব্যরত অবস্থায় একজন আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়াও এ ঘটনায়  একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর জখম হন। পরবর্তীতে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনসার সদস্য ফজলুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসী শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলসহ ৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিষয়টি জানতে পেরে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এরপর শুক্কুরসহ গ্রেপ্তার বাকি আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আত্মগোপনে চলে যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, মামলার তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার বিচার কাজ শেষে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই মামলায় পুলিশ কনস্টেবল আবদুল জলিল ফরাজীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে আসামি শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শুক্কুর আলিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে শুক্কুর আলী তার অপর দুই সহযোগীদের নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ‘দূর দূরান্ত’ নামক একটি বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান করে। অতঃপর শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা মিলে অজ্ঞাত একজন ভিকটিমকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন ঐ এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল জলিল ফরাজী ও আনসার সদস্য ফজলুল হক দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ছিনতাইকারী শুক্কুর আলীসহ ৩ জনকে আটকের চেষ্টা করে। এসময়  শুক্কুর আলী ও তার অপর সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে। এতে আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় এবং একজন পুলিশ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় অপর পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে শুক্কুর আলী ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কৌশলে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন,  শুক্কুর আলী ১০ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। সে আনসার সদস্য ফজলুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। শুক্কুর আলী চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ ও নাম পরিবর্তন করে কিছুদিন পর পর তার অবস্থান পরিবর্তন করতো।

শুক্কুর আলী এর আগে মাদক সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ৪ বছর, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ৫ বছর ও অপহরণসহ বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, এই সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপর আবার যারা এটার নেতৃত্ব এসেছিল তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আসলে এই ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর নতুন নতুন নেতৃত্ব আসে। এখন যদি আবার কেউ এই দলের নেতৃত্বে আসে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

মাসুম/ ইএইচ

Link copied!