নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ৮, ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
স্বৈরাচারী শাসনের অন্ধকার যুগ পার করে বাংলাদেশ এখন এক নতুন দিনের পথে। কার্যত গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর দেশে রচিত হয় নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়। সেই রাজনৈতিক রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ ফল— বিচার বিভাগের কাঠামোগত পরিবর্তন ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। ঠিক সেই প্রেক্ষাপটেই বিচার বিভাগের পরিবর্তন ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সাহসী পদক্ষেপের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। একসময় যে আদালত ছিল রাজনৈতিক চাপ, প্রভাব ও ‘ফরমায়েশি বিচারের’ আরেক নাম— এখন সেখানেই বইছে সুবিচারের সুবাতাস।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই যেন রাজনৈতিক ছায়ায় ঢাকা ছিল ন্যায়বিচার। প্রতিটি আদালত কক্ষই ছিল একেকটি ‘শ্বাসরুদ্ধকর অচলবস্থা’র প্রতিচ্ছবি। তবে সময় বদলেছে, বদলেছে শাসনব্যবস্থাও। আর সেই পরিবর্তনের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো উদাহরণ হয়ে উঠেছে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। কেউ কেউ আবার বলছেন, এটি বিচার বিভাগের সুপ্ত বিপ্লব। কেউ আবার বলছেন, এ এক নীরব ন্যায়-জাগরণ। এক কথায়— পুরনো সিএমএম আদালতের সাথে বর্তমানটির মিল খুঁজে পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব।
আদালত নয়, এখন এটি জনগণের আস্থা ও ন্যায়ের প্রতীক— বলছেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরাও। অতীতের অন্যায় বাস্তবতার নিরিখে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমলে ঢাকা সিএমএম আদালত ছিল কার্যত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণাধীন। মামলার দীর্ঘসূত্রতা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চার্জশিট ও জামিন বঞ্চনার মতো ঘটনা ছিল নিত্যদিনের গল্প। প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, তখন আদালত নয়, রায় আসতো প্রশাসনিক ‘টেবিল’ থেকে। তারা আরও বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় ফুটে উঠেছে স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা।
বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকরা নিচ্ছেন স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আজ প্রায় বিলুপ্ত। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, খোলামেলা শুনানি ও স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়াই এখন এই আদালতের বৈশিষ্ট্য। ঢাকা বারের একাধিক সদস্য জানান, বিচার এখন সত্যিকার অর্থে আইনের ভিত্তিতেই হচ্ছে। বিচারপতিদের চোখে-মুখে আমরা দায়িত্ব ও নিরপেক্ষতার দীপ্তি দেখতে পাচ্ছি। যে কারণে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও ফিরে এসেছে আস্থা। জানতে চাইলে এক তরুণ ভিসা প্রত্যাশী জানান, আগে মনে হতো— আদালতে গেলে সময় আর ধৈর্যের শেষ পরীক্ষা দিতে হবে। পূর্বে যখন কোর্টে যেতাম, মনে হতো সবকিছু অনিশ্চিত। মামলার অগ্রগতি হতো না, ঘুরতে হতো সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এখন সময়মতো শুনানি হচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে আদালত সহায়তা দিচ্ছে। মাত্র তিন সপ্তাহে আমার ভিসা মামলারও নিষ্পত্তি হয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা কিংবা বরিশালের সিএমএম আদালতগুলোতে এখনও কিছুটা বিলম্ব বা রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ থাকলেও, ঢাকা এখন অন্যসবকে ছাপিয়ে নতুন মডেল তৈরি করছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, ঢাকা সিএমএম আদালতের এই রূপান্তর কেবল একটি ভবনের পরিবর্তন নয়, এটি বিচার ব্যবস্থার আস্থা পুনর্গঠনের গল্প, যা গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করছে। এই পরিবর্তনই প্রমাণ করে— যখন রাষ্ট্র চায়, বিচার বিভাগও হতে পারে সত্য, ন্যায় আর জনগণের আশার আলো।