পনির ভূইয়া, সোনারগাঁ
জুলাই ৮, ২০২৫, ১২:১৪ এএম
বিসিএস প্রশাসনের ৩৪তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা ফারজানা রহমান। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায়।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা সোনারগাঁ উপজেলার সংকট, সম্ভাবনা, শিক্ষা ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। একান্ত সাক্ষাৎকারে উপস্থাপন করেছেন প্রতিবন্ধকতার নানা দিকও। তার মুখোমুখি হয়েছিলেন আমার সংবাদ-এর সোনারগাঁ উপজেলা প্রতিনিধি পনির ভূইয়া।
আমার সংবাদ : দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফারজানা রহমান : বর্তমানে কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাদের দায়িত্বগুলো বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তারা পালন করছেন। এর মধ্যে এমপি, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর না থাকায় এবং ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় তাদের দায়িত্বগুলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ও উপজেলা প্রশাসনকে পালন করতে হচ্ছে। আমাকে পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে- যা খুবই চ্যালেঞ্জিং।
তবে ৫ আগস্টের পর থেকে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আমরা সেগুলো নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে পুনরায় চালু করেছি। বড় বড় রাস্তা মেরামতসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করে আসছি। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক স্যারকে সঙ্গে নিয়ে সোনারগাঁয়ের পরিবেশকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাসহ রাস্তা ও বিদ্যালয়গুলোতে ১০ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
আমার সংবাদ : সেবা প্রদান ব্যবস্থা কীভাবে উন্নত করা হচ্ছে।
ফারজানা রহমান : জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি, এসব সেবা যেন আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। এর জন্য আমরা দায়িত্বগুলো পুনরায় বিশ্লেষণ করে কাজ করছি, যাতে মানুষকে উপজেলা পরিষদে না আসতে হয় এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই এসব সেবা প্রদান করা যায়।
আমার সংবাদ : বর্তমানে আপনার এলাকায় কোন কোন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।
ফারজানা রহমান : বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ঐতিহাসিক পঙ্গীরাজ খাল দখলমুক্ত করে তা সংস্থার কাজে হাত দিয়েছি। বর্তমানে ছোট ছোট গ্রামীণ পাকা রাস্তাসহ ১% থেকে পঞ্চমিঘাট জিসি টু উচিৎপুরা জিসি ভায়া বারদী শান্তিবাজার সড়কের বড় একটি রাস্তার কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। যা অল্প কিছু দিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। এছাড়াও সেবাভোগীদের জন্য মনোরম বসার সুব্যবস্থা (ক্ষণিকালয়) সমাপ্ত এবং জনগণের দ্বারপ্রান্তে সেবা পৌঁছে দিতে ভূমি সেবা প্রদানে গণশুনানি, রাস্তা প্রশস্তকরণসহ বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলোর কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
আমার সংবাদ : সমাজে মাদক, বাল্যবিয়ে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আপনার কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কী।
ফারজানা রহমান : আমরা চাই ছেলেমেয়েরা যাতে পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হন। অল্প বয়সে বিদ্যালয় ছেড়ে শিশু-কিশোররা কর্মমুখী না হয়ে যাক- এটা আমরা কোনোভাবেই চাই না। আমরা শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সিরিয়াস। ইতোপূর্বে একটি ওয়েবসাইটও চালু করেছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেছি। এছাড়াও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে থানা প্রশাসনসহ তৎপর রয়েছি। এসব কাজে স্থানীয় জনগণকেও যুক্ত করা হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি না থাকায় সামান্য সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে। কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের লোকের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা থাকে সবচেয়ে বেশি। সহজেই সবাইকে জেনেশুনে সেবা প্রদান করা সহজ হয়।
আমার সংবাদ : দুর্নীতি প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে কী।
ফারজানা রহমান : প্রতি মাসে আমি সব দপ্তর প্রধান এবং এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা করে আসছি। এই সভাগুলোতে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আপনারা অবগত আছেন আমি ভূমিবিষয়ক দুর্নীতি রোধ করতে ইতোপূর্বে আমার উদ্যোগে মাসে একবার ওপেন গণশুনানি চালু করেছি। এখানে সবাই তাদের সমস্যার কথা বলতে ও সমাধানের সহজ পথ খুঁজে পাবে। কাজ করতে কোনো দালাল ও সরকারি ফি বাদে অন্য কোনো টাকা পয়সা লাগবে না।
প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে এ ধরনের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজ থেকে সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা।
আমার সংবাদ : উপজেলা উন্নয়ন কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী।
ফারজানা রহমান : উপজেলার উন্নয়ন সাধনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সীমিত সম্পদ এবং দক্ষতার অভাব। অনেক সময় স্থানীয় জনগণের সচেতনতার অভাবও লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা বাধা আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, অল্প কিছু দিন হয় আমি সোনারগাঁয়ে যোগদান করেছি।
সোনারগাঁয়ের দীর্ঘদিনের সমস্যা হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ করে যানজট মুক্ত করা। আমরা কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সহনশীলতায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, এটা চলমান রয়েছে। আরও কাজ করতে হবে, এক্ষেত্রে তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতা ও সমন্বয়ে কাজ করতে পারলেই সোনারগাঁকে একটি আধুনিক সোনারগাঁ উপজেলা হিসেবে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারব ইনশাআল্লাহ।