অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু প্রতীক্ষিত আমডাঙ্গা খাল পুনঃখনন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, দ্রুত কাজ শুরু না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই ভবদহপাড় ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আমডাঙ্গা খালের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করলেও তা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পাউবোর যশোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার মুখার্জি।
তিনি বলেন, “এ বছর আগাম বর্ষার কারণে ইতোমধ্যে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। খালে বর্তমানে পানি প্রবাহ রয়েছে। এই অবস্থায় খালের মধ্যে খনন কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিকল্প কী করা যায়, তা নিয়ে আমরা স্থানীয়দের মতামত নিচ্ছি।”
খালপাড়ের বাসিন্দা মিঠু পাল বলেন, “খাল ভাঙনের কারণে আমার বাড়ি ঝুঁকিতে পড়েছে। বসতভিটার সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ না করলে আমি জায়গা ছাড়তে পারব না।” অন্য বাসিন্দারাও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন খালের ভেতরে খনন কাজ শুরু হলে আশপাশের বাড়িঘর ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে তারা আপাতত ব্লক না তোলার পক্ষে মত দেন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা অধ্যাপক অনীল বিশ্বাস বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে, ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ শুরু করেনি। এখন খাল পানিতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে কাজ না করার পাঁয়তারা চলছে।” তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকায় ফের জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।”
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান পিয়াল জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় ভবদহের ভৈরব-আফরা নিষ্কাশন উপ-প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমডাঙ্গা খাল প্রশস্তকরণ ও পুনঃখননের জন্য ৪৯ কোটি ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ১৭ জুন ২০২৫ থেকে ২৬ জুন ২০২৬ পর্যন্ত। কাজের দায়িত্ব পেয়েছে ময়মনসিংহের ভাওয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন।
উল্লেখ্য, ভবদহের জলাবদ্ধতা নতুন কোনো সমস্যা নয়। আশির দশকে টেকা, শ্রী ও হরিনদী নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কোনো কোনো বছর মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়, আর তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে থাকে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৫ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য এম এম আমিন উদ্দিন আমডাঙ্গা খাল খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু রেললাইন ও মহাসড়কে ছোট ছোট কালভার্ট থাকায় পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে ২০০৬ সালে সেগুলো ভেঙে বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এরপরও খালটি সঠিক পরিকল্পনায় খনন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এ কারণেই আবারও খালটির পুনঃখননের দাবি জোরালো হয়।
ইএইচ