আলী হাসান, জয়পুরহাট
জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
জয়পুরহাট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গত দুই দশকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এসব হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া নেমে এলেও আজও কারও বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
নিহতদের পরিবারগুলো বলছে, বিনা উসকানি ও অপরাধ ছাড়াই তাদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রিয়জন হারিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কেউ পাগলপ্রায়, কেউবা সন্তানদের নিয়ে বিপর্যস্ত জীবন যাপন করছেন। সীমান্তে একতরফা এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
হাটখোলা গ্রামের নিহত জনির বাবা আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে বেঁচে থাকলে কোরআনের হাফেজ হতো।”
জনির মা বিলকিস বেগম বলেন, “এখনও কোনো বিচার পাইনি, মামলা পর্যন্ত হয়নি!”
নুন্দইল গ্রামের নিহত শামীমের স্ত্রী পরিবানু বেগম জানান, “একটা সন্তানকে আমি বড় করতে পারিনি, অন্যের হাতে দিয়ে দিয়েছি।”
একই গ্রামের নিহত জামিরুল মণ্ডলের বড় ভাই খাইরুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। আজও বুঝে উঠতে পারিনি, কেন তাকে হত্যা করা হলো!”
একই গ্রামের উলফন বেগম, তার একমাত্র ছেলে রাজুকে হারিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলেন, “আমারে বিচার কইরা দেন।”
নিহত জনির চাচা আতোয়ার বলেন, “বিএসএফ আমার ভাতিজার হাত-পা কেটে, চোখ উপড়ে লাশ পাঠিয়েছে।”
উচনা সোনাতলার নিহত মুনসুর আলীর মা জানান, “ওরা আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে পাটের জাগের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল।” তার বাবা আব্দুল বাসেত ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, “আমরাই শুধু মরি, ওরা কেনো মরে না?”
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির জয়পুরহাট জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংগঠক ওমর আলী বাবু বলেন, “জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিগত সরকার এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান সরকারের উচিত দ্রুত তদন্ত করে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।”
জয়পুরহাট জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহানুর আলম শাহীন বলেন, “সীমান্ত হত্যাকাণ্ড যদি দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।”
সীমান্তের এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা থামাতে হলে প্রয়োজন আন্তঃরাষ্ট্রীয় আন্তরিকতা, কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা। তা না হলে সীমান্তের এই কান্না থামবে না—রক্তের হোলিখেলা চলতেই থাকবে।
ইএইচ