ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

তবু বাবাই সেরা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ১৯, ২০২২, ০৫:০৮ পিএম

তবু বাবাই সেরা

সবার কাছে বাবা মানে কতকিছু কত আবদার কত চাওয়া আর কত কি!  কিন্তু আমার কাছে বাবা মানে শুধু বাবাই। কোন চাওয়া নেই কোন পাওয়া নেই, অনুভূতিহীন। 

মা বলে আমি নাকি যখন সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছিলাম তখন বাবা অনেক বড় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলো। বাবার মেরুরজ্জু শুকিয়ে গিয়েছিল।  সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না এবং হাঁটতে ও পারতেন না। চিকিৎসা করার জন্য টাকা ও ছিলো না। কেননা বাবা অসুস্থ হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত নাপিতের কাজ করতো। মা বলতো, বাবা নাকি খেজুরের পাতা দিয়ে বানানো চাটাই বিছিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকতো আর মানুষের কাছে সাহায্য চাইতো কারণ তখন আমাদের পরিবারে উপার্জনের কেউ ছিলো না। বাবার চিকিৎসা করার মতো ও টাকা নেই।  বোনেরা অন্যের বাসায় কাজ করতো আর ভাইয়া তখন ও স্কুলে ভর্তি হয়নি। 

তখন দাদা ছিলো, দাদা নাকি বলেছিলো তার জমি বিক্রয় করে বাবার চিকিৎসা করতে পারবে না। কিন্তু সেই জমি বিক্রয় করেই তবে বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। 

বাবা অপারেশনের পরে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেন কিন্তু কোন কাজ করতে পারেন না। এর মধ্যে আর্থিক অসচ্ছলতা কারণে পরিবারে সব সময় ঝগড়া লেগেই থাকতো। বিশেষ করে মা-বাবার ঝগড়া। বাবা চাইতো আমরা কেউ যেন পড়াশোনা না করে কাজ করি তাহলে টাকা আয় হবে। কিন্তু মা চাইতো আমরা পড়াশোনা করি।

এর মধ্যে ভাইয়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত উঠে যায়। আমি তখন ও ভর্তি হইনি। স্কুল ব্যাগ ও ছিলো না আমাদের কারোই।  

বাবা তখন ও দিনে  দুই তিন জনের চুল কাটাত। এবং মানুষের একটু চাপ হলেই ভাইয়াকে ডাকতো চুল কাটানোর জন্য।  একদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে ভাইয়াকে চুল কাটাতে ডাকলো কিন্তু ভাইয়া স্কুলে যাবে এজন্য ভাইয়াকে মারার জন্য তাড়া করেছিলো। সেদিন ভাইয়া ভয়ে বাসায় আসতে পারেনি। চুপিচুপি আমি ভাইয়ার বই খাতা দিয়েছিলাম বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য।  কোন কোন সময় রাতে আমাদের পড়তে দিতো না কেরোসিন ফুরিয়ে যাবে তাই।  আমার এখন ও মনে আছে প্রতিদিন আমাকে সন্ধায় পাঁচ থেকে ছয় টাকা দেওয়া হতো কেরোসিন আনার জন্য আর সেটা প্রায় দুইদিন যেতো। 

এভাবে চলছিলো আমাদের দিন, আমাদের পড়াশোনা।  আমাকে ও বাবা প্রায় চুল কাটাতে ডাকতো। মাঝে মধ্যে পড়াশোনার জন্য যদি বলতাম কাটাতে পারবো না তখন আর পড়তে দিতো না। 

একদিন সকালে আমাকে চুল কাটাতে ডাকলো। পরের দিন ছিলো আমার এসএসসি পরীক্ষা। চুল না কাটাতে গেলে সারাদিন পড়তে দিবে না আর গেলে আমার পড়া হবে না। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে চুল কাটাতে গিয়েছিলাম এবং একজন মানুষের চুল ও কেটে দিয়েছিলাম।  

কিন্তু এখন আর এমন কিছুই নেই।  আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠে গেছি আর ভাইয়া স্নাতক, স্নাতকত্তর শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। 

বাবা আমাদের সাথে এমন আচরণ করে ভেবে সেই সময় কতোই না গালি দিয়েছি মনে মনে। কিন্তু এখন সেগুলো ভাবলেও মন থেকে শ্রদ্ধা আসে, আসে ভালোবাসা।  সেই অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি আমাদের পোশাক না দিক পড়াশোনার খরচ না দিক পড়তে না দিক আমাদের তিন বেলা খেতে দিতেন নুন দিয়ে হলেও। এখন জানি, টাকা না থাকলে মানুষের আচরণের কত পরিবর্তন হয়ে যায়। টাকা ছাড়া পুরুষ যেন হিংস্র পশু। এখন নিজে আয় করে নিজে পড়াশোনা করি কিন্তু যখন টাকা না থাকে তখন মাথায় কোন কিছু কাজ করে না। মনের অজান্তে কত মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। কিন্তু সেই সময় বাবাকে কতই না গালি দিতাম ভেবে এখন কান্না পায়। 

বাবা অল্প একটু রোজকার করতে পারলেই আমাদের জন্য হাট থেকে নাস্তা ও নিয়ে আসতো মাঝে মধ্যে।  এখন ও ঈদে যেখানে আমরা বৃদ্ধ মা-বাবা কে পোশাক দিবো সেখানে বাড়ি গিয়ে দেখি বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য কিছু কিনতে না পারুক দুইটা লুঙ্গি কিনে রেখেছেন।  এবং সেটা উনার ঘরেই রাখতো। আমরা বাসায় গিয়ে বসলেই আমাদের দেখানোর জন্য নিয়ে আসতো তখন বাবার চোখে মুখে দেখতাম কত প্রশান্তির ছাপ।  

এখন মাঝে মধ্যে সেই ছোট বেলার কথা মনে উঠলে মনে হয় কত কঠিন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে বাবাকে যেতে হয়েছে। পরিবারের চার পাঁচ জন মানুষের খাবার যোগানো যদিও অনেক আত্মীয় আমাদের সাহায্য করেছেন।  সাথে ছিলো মায়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রম।  তারপর ও বাবার জন্য শ্রদ্ধা কাজ করে। বাবাকে কত নিষ্ঠুর হতে হয়েছে পরিবার চালানোর জন্য।   

মা-বাবা দুইজনই বেঁচে আছেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে উনাদের খেদমত করার তাওফিক দান করেন। সকলকে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক: রুহুল আমিন 

শিক্ষার্থী 
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,যশোর।

Link copied!