ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

হাইড্রোলিক হর্নে স্বাস্থ্যঝুঁকি

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

জুন ২৪, ২০২২, ০১:২৬ এএম

হাইড্রোলিক হর্নে স্বাস্থ্যঝুঁকি

হাইড্রোলিক হর্ন, সাইরেন ও শব্দদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। দিনদিনই বাড়ছে যানজট আর হাইড্রোলিক হর্নের উৎপাত। এ হর্ন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। রাজধানীতে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও লেগুনার হাইড্রোলিক হর্নে অতিষ্ঠ জনজীবন।

লঞ্চের মাত্রাতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারেও অতিষ্ঠ সদরঘাট এলাকার বাসিন্দারা। শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন রোগী, শিশু, বয়স্ক ও ট্রাফিক সদস্যরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দ মানমাত্রার চেয়ে বেশি হলে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে ভয়ঙ্কর হুমকিতে ফেলতে পারে। তাই হাইড্রোলিক হর্ন বা শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। 

পাশাপাশি এ হর্ন পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সরেজমিন দেখা যায়, ভয়ঙ্কর শব্দদূষণের কবলে রয়েছে ঢাকার বাসিন্দারা। হাইড্রোলিক হর্নের কারণে চালকদের জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে সুযোগ বুঝে অর্থাৎ ট্রাফিক সদস্যরা না থাকলে রাজধানীর লেগুনাসহ অন্যান্য বাস এ হর্ন ব্যবহার করছে। 

এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন, প্রাইভেটকার, লেগুনাসহ মোটরসাইকেল চালকরা এ হর্ন স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ-মন্দির-গির্জার আশপাশে থাকলেও বাস-প্রাইভেটকার চালকরা হর্ন বাজাতেই থাকে। শব্দদূষণ রোধে এ হর্ন বন্ধের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। শব্দদূষণের কারণে নগরীর বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।  

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫৫ এবং রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪৫ ডেসিবল (শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক) এবং নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ রয়েছে। তবে শব্দের সহনশীল মাত্রা যেখানে ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল থাকার কথা, সেখানে 
নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্নের কারণে ঢাকা শহরে শব্দের গড় মানমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৯৫ ডেসিবল। 

ফলে শিশু থেকে বয়স্ক, এমনকি সাধারণ মানুষ ও ট্রাফিকের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। সর্বশেষ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে ঢাকা। চতুর্থ স্থানে রাজশাহী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষের শব্দ গ্রহণের সহনশীল মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল। তবে ঢাকায় এই মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল। কিন্তু ঢাকা নগরীর কোনো কোনো এলাকায় নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শব্দ সৃষ্টি হয়। উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের অনিদ্রা, মাথাব্যথা, বধিরতা, হূদরোগ ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় রোগী, শিশু ও বয়স্করা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ২০০৬ বিধিমালার আওতায় পাঁচ শ্রেণির এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। কিন্তু আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে ড্রাইভারদের সচেতনতার বিকল্প নেই। 

এ ধরনের হর্ন যেন দেশে তৈরি, আমদানি ও গাড়িতে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। বাস, ট্রাক ছাড়াও মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার চালকদেরও তাদের বাহনে সহনীয় মাত্রার হর্ন সংযোগ করতে বাধ্য করতে হবে। আর সচেতনতা বাড়াতে পত্রিকা, টিভি ও রেডিওতে সচেতনতামূলক প্রচারণাও করতে হবে। 

ভিক্টর পরিবহনের চালক আল আমিন বলেন, শুধু আমার বাসে না রাজধানীতে চলা বেশিরভাগ বাসেই হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো রয়েছে। আমরা সুযোগ বুঝে অর্থাৎ যখন ট্রাফিক সদস্যরা না থাকে তখন এ হর্ন ব্যবহার করি। লেগুনা চালক জসিম মিয়া বলেন, আমাদের ছোটগাড়ি তাই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছি। রাস্তায় স্যারদের দেখলে (কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্য) তখন এ হর্ন বাজাই না। 

হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে জনসচেতনতায় কাজ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল আরেফিন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরও হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার চলছেই। এমনকি এর আমদানি ও বিক্রয় উভয়ই কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল, কিন্তু বর্তমানে হাইড্রোলিক হর্ন মানমাত্রা ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বধিরতা, উচ্চরক্তচাপসহ অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পরিবেশবিদরা বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিলেও রাষ্ট্র যদি বিষয়টা নিয়ে কঠোর না হয় তাহলে শব্দদূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে। 

নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. ইমরান খান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, অতিমাত্রার শব্দ মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। উচ্চ শব্দের কারণে মানসিক ও শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। পাশাপাশি শব্দদূষণের কারণে মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত হবেন। এছাড়া ক্ষুধামন্দা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাজে মনোযোগী হতে না পারা, কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করাসহ হূদরোগের সমস্যাও হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে অনেক সময় শিশুদের কানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বিকট শব্দের কারণে শিশুরা অনেক বেশি ভয় পেয়ে মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে। 

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবল মানমাত্রা থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৯০ ডেসিবল মানমাত্রা। রাস্তার পাশে শব্দদূষণ বেশি। যেখানে রাস্তা নেই সেখানে দূষণ নেই। শব্দদূষণের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে গাড়ির হর্ন। হাইড্রোলিক হর্ন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও তা সব জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়েও তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এ হর্ন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। 

আইনগতভাবেই অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর গাড়ি আছে সেগুলোর এখতিয়ার আছে। তারা ব্যতীত যারাই এ হর্ন ব্যবহার করছেন তারা আইন মানছেন না। জরিপ করতে গিয়ে যতগুলো গাড়ি দেখেছি সবগুলোতেই হাইড্রোলিক হর্ন রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি গাড়ির চালক, তরুণ হোন্ডাচালক, লেগুনা এরা বেশি ব্যবহার করছে। অটোরিকশা, লেগুনাটাইপের সারা দেশে হাইওয়েতে অবৈধভাবে চলাচল করছে সেগুলোতে এক ধরনের হর্ন ব্যবহার করছে, যেগুলো বারবারই হর্ন দিতে দিতে গাড়ি চালায়। এ হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ করার জন্য বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশকে বারবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। 

পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সদিচ্ছাবানও হতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে। নীরব এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের সামনের রাস্তাকে সবুজ বা সাদা কালার করে দিতে হবে। যাতে মানুষ আলাদা করে এটাকে বুঝতে পারে। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করা। তাছাড়া রাত ৯টার পর আবাসিক এলাকায় কোনো সাউন্ড ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করে আইনও রয়েছে।

Link copied!