Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ল্যাম্পপোস্ট আছে জ্বলে না বাতি

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

জুলাই ২৬, ২০২২, ০২:১৮ এএম


ল্যাম্পপোস্ট আছে জ্বলে না বাতি

সারিবদ্ধভাবে লাগানো আছে ল্যাম্পপোস্ট, রয়েছে বিদ্যু সংযোগ, সব ঠিক থাকলেও জ্বলে না এর বাতি। রাজধানীর গুলশান লেকপাড় থেকে গুদারাঘাট ও মায়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত লাগানো ল্যাম্পপোস্টগুলো কখনোই জ্বলে না। তবে বাঁশতলা থেকে লেকপাড় পর্যন্ত কয়েকটি বাতি জ্বলে। 

হাতিরঝিলের এ সংযোগ রাস্তাটি সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানের বাতিতে আলোকিত। দোকানপাট বন্ধের পর পুরো সড়টি থাকে ঘোর অন্ধকারে। লেকপাড়ের এ রাস্তায় যানবাহন ও দোকানে জ্বলা বাতির আলোতেই পথাচারীদের চলাচল। 

এদিকে অন্ধকারে ডুবে থাকা রাস্তায় বসে বখাটে-মাদকসেবীদের আড্ডা, নিয়মিতই ঘটে ছোটখাটো সড়ক দুর্ঘটনাসহ চুরি-ছিনতাইও। এছাড়া ঝিলপাড়ের এ পথে রাখা হয়েছে ট্রাক-পিকআপ। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ল্যাম্পপোস্টগুলোর বাতি জ্বালানোর দাবি এলাকাবাসী ও পথচারীদের।  

সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশতলা মরিয়ম টাওয়ার-১ থেকে লেকপাড় পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ১৮টি, এর মধ্যে ৯টির বাতি জ্বলছে। গুলশান লেকপাড় থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ৫৫টি, সবকটিই নেভানো থাকে। 

আর গুদারাঘাট থেকে পুলিশ প্লাজার পেছনে মায়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ৪২টি, এখানেও সবকটি বাতি জ্বলছে না। এসব ল্যাম্পপোস্ট লাগানোর পর কয়েকদিন জ্বললেও গত চার-পাঁচ বছর ধরে তা জ্বালানো হচ্ছে না। ফলে মোবাইলের আলোতেই চলাচল করতে হয় নগরবাসীকে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কে বাতি না জ্বলায় নিয়মিত ঘটছে পতিতাবৃত্তিসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা। মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাড্ডা-গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তা উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ ফুটপাতের দোকানিদের। 

পথচারীরা জানান, রাস্তাটিতে অন্ধকার থাকায় নেশাখোরদের আনাগোনা থাকে অহরহ। ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই এই পথ পরিহার করছেন।

মায়াগঞ্জ মোড়ের ফুচকা বিক্রেতা তারেক দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, আমি এখানে পাঁচ-ছয় বছর ধরে দোকান করি। বছরে ১০ দিন বাতি জ্বলে কি-না সন্দেহ আছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় দোকান শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আমার স্যামসাং ব্যান্ডের মোবাইল ও দুই হাজার ৪০০ টাকা ছুরি ধরে টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। 

এ ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাড্ডা থানায় জিডি করি, কিন্তু এর কোনো হদিস মেলেনি। ল্যাম্পপোস্ট না জ্বলার কারণে এখানে প্রায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অন্ধকার থাকায় লেকপাড়ের পাশে অসামাজিক কার্যকলাপও চলে। কেউ কিছু বলে না। 

লেকপাড়ের এ সড়কে বেলপুড়ি বিক্রি করেন শফিক মিয়া। তিনি বলেন, রাতে বাসায় ফেরার পথে ১৩ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। চিৎকারও দিতে পারেনি, যদি পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। থানায় অভিযোগ করেছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী ও দোকানিরা জানান, কয়েক বছর ধরেই বাতিগুলো জ্বলছে না। রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। সে পর্যন্ত দোকানের আলোতে সড়ক আলোকিত থাকে। 

তাও অর্ধেক রাস্তায় আলো হয় কিন্তু বাকি রাস্তায় হালকা অন্ধকার থাকে। দোকান বন্ধের পর এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। নেশাখোর ও ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়। এছাড়া সড়ক বাতি না থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বালানোর দাবি জানাচ্ছি। 

শাহজাদপুর এলাকার বাড়িওয়ালা তানভীর আহমেদ নীলয় আমার সংবাদকে বলেন, সন্ধ্যার পর পরিবারের সদসদ্যদের নিয়ে লেকপাড়ে হাঁটতে বের হওয়া যায় না। কারণ অন্ধকার থাকায় সংযোগ এ সড়কটি নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে। দ্রুত সড়কবাতিগুলো সচল করার দাবি জানাচ্ছি। 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ল্যাম্পপোস্টগুলোতে বাতি লাগানো হয়নি। বাতিগুলো আসেনি, তাই লাগানো হয়নি। আমি সিটি কর্পোরেশনকে জানাচ্ছি। কালকেও আমি সিটি কর্পোরেশন অফিসে যাবো। ল্যাম্পপোস্টগুলো ছয়মাস ধরে লাগানো রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁশতলা থেকে পুলিশ প্লাজার পেছনে মায়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত লাগানো  ল্যাম্পপোস্টগুলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে। এখানে আমাদের কাজ করার সুযোগ নেই। আমাদের অধীনে থাকলে এতদিন এভাবে থাকত না।

Link copied!