Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বইমেলা ২০২৩

সংকটে লেখক-প্রকাশকরা

মো. নাঈমুল হক

জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০১:১৭ পিএম


সংকটে লেখক-প্রকাশকরা
  • মেলায় ৫০ শতাংশ বই কম আসবে
  • ৪০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে

 নতুন লেখকদের বই চলবে কি না সন্দেহ

—হাসান জায়েদী, স্বত্বাধিকারী, পার্ল প্রকাশনী

 দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হবে

—ড. কামরুল ইসলাম, অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনার অতিমারির পর দেশে পুনরায় বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মাঝে প্রকাশকদের ৮০ শতাংশ বইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে থাকে উৎসবের আমেজ। সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকদের টিকে থাকার অন্যতম উপলক্ষ হলো এই মেলা। 

কিন্তু সেই উৎসবে ভাটা পড়েছে। প্রকাশকরা আছেন নানামুখী সংকট ও চ্যালেঞ্জে।  গতবারের তুলনায় এবার বইমেলায় নতুন বই  ৫০ শতাংশ কম আসবে। বইগুলোর দাম ৪০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। বড় প্রকাশকদের তুলনায় ছোট প্রকাশকদের অবস্থা বেশি খারাপ। অধিকাংশ বই গতবারের চেয়ে কিছুটা নিম্নমানের কাগজে চাপা হবে। প্রকাশকরা নতুন লেখকদের সুযোগ দিতে পারছেন  না। 

তবে জনপ্রিয় লেখকরা মনে করেন, এবার মেলায় মানসম্মত বই বেশি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। বই প্রকাশকরা জানিয়েছেন, কাগজের দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধিসহ বই প্রকাশের সাথে সম্পর্কিত সব পণ্যর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার সঠিকভাবে বাজার তদারকি করলে এমনটা হতো না। নতুন বই প্রকাশ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, দাম বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎ। 

বইয়ের দাম বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ বলেন, ৪৫ বছর পূর্ণ হলো প্রকাশনা ব্যবসার সাথে আছি। কিন্তু এবারের মতো এতটা সংকটে আর পড়িনি। দেশে ডলারের দাম বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা। অথচ কাগজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। 

৮০ গ্রাম কাগজের রিম গত বছর ১৬০০  টাকা ছিল,  বর্তমানে সেই কাগজ ৩৫০০-৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা তো বৈশ্বিক সংকটের ফল নয়, আমাদের তৈরি করা কৃত্রিম সংকট। সরকার ভালো করে বাজার মনিটরিং করলে এ সংকট এতটা কঠিন হতো না ।

সব উপকরণেরই দাম বেড়েছে। তারপরও বই প্রকাশ না করে পারি না। যতটা টাকা মিনিমাইজ করে বাজারে পাঠানো যায়, আমরা সে চেষ্টাই করছি।

কাগজের দাম বৃদ্ধির পেছনে সরকারকে দায় দিয়ে অন্যধারা প্রকাশনার মালিক মনিরুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় অর্ধেক বই প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি। কাগজ মালিকদের সিন্ডিকেটে পড়ে আমাদের ব্যবসা বন্ধের পথে। অনেকটা চ্যালেঞ্জের ওপর এবার বই প্রকাশ করেছি। 

আগামীবার এসে আমাদের পাবেন কি না জানি না। অনেকেই বলেন, ট্যাক্স কমানোর জন্য, ভর্তুকি দেয়ার জন্য। কিন্তু এর মাধ্যমে তো আমরা লাভবান হবো না। সরকারের কাগজের দাম কমানোর জন্য কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল। সরকারি মিলগুলো বন্ধ কেন? সেগুলো চালু থাকলেও অন্যরা দাম বাড়াতে পারত না।

পার্ল প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী হাসান জায়েদী বলেন, এবার বই মাত্র ৪-৫টি আসবে। যদিও গতবার ২৫টির মতো বই প্রকাশ করতে পেরেছি। কাগজের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও বইয়ের দাম বাড়াতে হচ্ছে। সব বই তো পাঠক বেশি দামে কিনতে চাইবে না। নতুন লেখকদের বই চলবে কি না আমরা সন্ধিহান। সেজন্য নামি লেখকদের বই প্রকাশ করে আপাতত টিকে থাকতে চাই।

প্রকাশকদের চ্যালেঞ্জের মুখে টিকে থাকার কথা জানিয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনী সমিতির ফরিদ আহমেদ বলেন, কাগজের দামই যদি দ্বিগুণ হয়, তাহলে একটি নতুন বই প্রকাশের সাথে কালী, বাইন্ডিং, ডিজাইন খরচসহ ১৪টি বিষয় জড়িত। একটি বই প্রকাশ করতে গেলে প্রকাশকদের ফর্মা প্রতি গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি করা দরকার। কিন্তু প্রকাশকরা চাইলেই সেটা পারবেন না। সৃজনশীল বই পড়ে মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত বইয়ের পেছনে খরচ করার মানুষ কজন পাওয়া যাবে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষ এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর চাপে আছে। এমতাবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে যাতে এর প্রভাব না পড়ে, সেজন্য সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বই প্রকাশ কমে গেলে বা নতুন লেখক তৈরি না হলে দেশের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর দায় জাতি হিসেবে আমাদের বহন করতে হবে। এমনিতেই বিশ্বের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বিভিন্ন সংকটে পিছিয়ে থাকার দৃশ্যমান প্রভাব না থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি ফল অবশ্যই আছে।

লেখকদের সংকটের কথা জানিয়ে বিশিষ্ট থ্রিলার উপন্যাস লেখক নিয়াজ মাওলা বলেন, রয়ালটির ক্ষেত্রে সব লেখককে সমান সমস্যায় পড়তে হয়নি। নতুন লেখকদের এবার সমস্যাটি বেশি। পূর্বে প্রকাশকদের পক্ষ থেকে লেখকরা ফেভার পেলেও এবার সেটির সুযোগ একেবারেই নেই। জনপ্রিয় লেখকদের বই বাজারে আসছে। ইতিবাচক দিক হলো এবার সব ভালো মানের বই মেলায় থাকবে। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতিটা এড়ানো যাবে না।

তরুণ উপন্যাস লেখক উদাত্ত মহীসূর বলেন, এবার প্রকাশকদের পক্ষ থেকে সাড়া পাচ্ছি না। একটি বই প্রকাশ করতে পারলেও রয়ালটির টাকা পাব কি না জানি না।

Link copied!