ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

তীব্র দাবদাহেও লোডশেডিং

মহিউদ্দিন রাব্বানি

এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ১২:৪৮ এএম

তীব্র দাবদাহেও লোডশেডিং
  • এক হাজার ওয়াটের বেশি লোডশেডিং
  • সাহরি-ইফতারে থাকছে না বিদ্যুৎ
  • জেনারেটরে চলে অপারেশন থিয়েটার 
  • খুলনাঞ্চলে চরম বিদ্যুৎবিপর্যয়
     

বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। দিন দিন বাড়ছে দাবদাহ। বিপর্যের মুখে মানুষ ও পশুপাখির জীবন। টানা খরতাপে পুড়ছে পুরো দেশ। হুমকির মুখে ফল ও ফসল। বৈশাখের খরতাপে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। পবিত্র রমজানের রোজার মধ্যে প্রায় ছয় দশকের রেকর্ড তাপমাত্র। তার মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। রাজধানীসহ সারা দেশে লোডশেডিংয়ের কবলে পুড়ছে চার কোটি গ্রাহক ও ১৬ কোটি মানুষ। রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের প্রভাব কিছুটা কম থাকলেও রাজধানীর বাইরের ওষ্ঠাগত জনজীবন। বছরের শুরুতে বিদ্যুতের চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন নিয়ে যাওয়া পরিকল্পনা থাকলেও শুরুতে হোঁচট খায় বিদ্যুৎ বিভাগ। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়দার দাম বৃদ্ধি ও ডলার সংকটে উৎপাদন শুরুর এক মাসের মাথায় রামপালের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। চুক্তি মোতাবেক সরকারকে প্রতি মাসে গাচ্ছা দিতে হতো ৭০০ কোটি টাকা। পরে দফায় দফায় চুক্তি সংশোধন করা হয়। সব চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। আশার আলো জ্বলে বিদ্যুতে। 

তীব্র দাবদাহে বেড়ে যায় বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে পুরো দেশ। যদিও গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড গড়ে। সেদিন  রাত ৯টায় সেটিকে ছাড়িয়ে ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। গত বুধবারও বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৪ হাজার ৯৩২ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। এতে অনেকটা বাধ্য হয়েই লোডশেডিং বাড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে যে ঘাটতি থাকে বিতরণ পর্যায়ে তার চেয়ে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট চাহিদা বেশি থাকে। ফলে বিতরণ পর্যায়ে লোডশেডিং আরও বেশি হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা না কমলে লোডশেডিং কমানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

সূত্র মতে, গত ১৪ এপ্রিল গ্যাস সংকটের কারণে ২১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ছিল; জ্বালানি তেল (ফার্নেস অয়েল) সংকটের কারণে পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ ছিল ২৩টি কেন্দ্র এবং কয়লা সংকটের কারণে আংশিক বন্ধ ছিল দুটি কেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের  (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১৪ এপ্রিল ছুটির দিনে তীব্র লোডশেডিংয়ে পড়ে গ্রাহকরা। ওই দিন রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়। সারা দিন তা ওঠানামা করলেও রাত ১১টার পর আবারও লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। এর মধ্যে রাত ৩টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩২৮ মেগাওয়াট। ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে ওই সময়ও ৩০৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। যদিও ওই দিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল বিকেল ৪টায় ৭৭৬ মেগাওয়াট। সে সময় দেশের একটি বড় অংশ টানা চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ আসে আট ঘণ্টা পর। এরও আগে ৬ সেপ্টেম্বর একবার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। তখন দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা। তীব্র দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে এ ঘটনায় তাদের ভোগান্তি বাড়ে। আবার ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষও গরমে কাহিল হয়ে পড়েন। হাসপাতালগুলোতে বেগ পেতে হয়েছে চিকিৎসাসেবা দিতে। পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামে গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী-মদুনাঘাটের ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে কারেন্ট ট্রান্সফরমারের (সিটি) বিস্ফোরণে গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অত্যধিক গরমে এ বিস্ফোরণ হয়েছে, প্রাথমিকভাবে এমনটা ধারণা করছেন তারা। প্রবর্তক এলাকার প্রিমিয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. বেলাল বলেন, বেলা ৩টা ২০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালাতে হয়। দীর্ঘক্ষণ জেনারেটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করাও কষ্টসাধ্য। পিডিবির প্রকৌশলীরা বলেন, চট্টগ্রামে এমনিতেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটল। চাঁদপুর জেলার মরিয়ম আক্তার মুন্নি আমার সংবাদকে জানান, রোজার মাসে তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিং থাকে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা। এতে অতিষ্ঠ জনজীবন। 

শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি জানান, সকাল থেকে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া শুরু হয়। বিকেলের আগে অন্তত ছয়বার গেছে। পরে গণনা করা বাদ দিয়েছেন। বিকেলে একবার যাওয়ার পর আসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। ১০ মিনিট পর আবার চলে যায়। পুরো দিনটা বরবাদ হয়ে গেছে। খুলনাঞ্চলের তাপমাত্রার পারদ গত ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে আরও ঊর্ধ্বমুখী। অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে শুরু হয়েছে দফায় দফায় লোডশেডিং। দুপুর, সন্ধ্যা, গভীর রাত কিংবা ভোর কোনো নিয়মই মানছে না বিদ্যুতের লুকোচুরি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে খুলনার জনজীবন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মশার উৎপাত। সব মিলিয়ে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে খুলনার মানুষ। এদিকে তীব্র দাপদাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। শহরের বেশ কিছু সড়কের পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। খুলনার আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তারাবির নামাজের সময় আরেক দফা গিয়েছে। রাত ২টা ২১ মিনিটে লোডশেডিং শুরু হয়ে ছিল এক ঘণ্টা। আবার ভোর সাড়ে ৫টায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়। এবারও বিদ্যুৎ ছিল না এক ঘণ্টা। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় ‘ভয়ঙ্কর আজাব’ শুরু হলো। মশার যন্ত্রণায় বাইরে বসে থাকারও উপায় নেই। এই কষ্ট বলে বোঝাতে পারব না।

ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকোর) প্রধান প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। লোড বেড়ে যাওয়ায় ট্রান্সফর্মারসহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এ সব মেরামতে সময় লাগছে। এ ছাড়া সরবরাহ কম থাকায় কিছু লোডশেডিং হচ্ছে। তবে পরিমাণে কম। সিলেটে সাহরি ও ইফতারের সময় লোডশেডিং থাকে। রমজান চলমান, সাথে গরমের উত্তাপ। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারের সময় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায় তেমনি রাতে সাহরির সময়ও হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। দিন রাত মিলিয়ে প্রায় ছয়-সাতবার বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটি কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নয়। সারা সিলেট শহরেই একই অবস্থা। তার ওপর বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি কোনো লোডশেডিং শিডিউল। তাই এই রমজান মাসে গত দুদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিলেট নগরীর বাসিন্দারা। 

এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘সিলেটে বর্তমানে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং করা হচ্ছে। হঠাৎ অতিরিক্ত গরমের কারণে জেনারেশন ফল্ট করছে তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তার ওপর আসন্ন ঈদের কারণে মার্কেট শপিংমলগুলোও বেশ রাত পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। সব মার্কেট শপিংমলই এসি করা। বাসা বাড়িতেও এসির ব্যবহার বেড়ে গেছে তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।’ রাজার মাস চলছে। তার ওপর অত্যধিক তাপমাত্রায় চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুতের ঘাটতিও বেড়েছে। তাপমাত্রা না কমলে চাহিদা কমবে না। এ ক্ষেত্রে গ্যাস ও তেলের সরবরাহ বাড়াতে হবে; অন্যথায় লোডশেডিং কমানো কঠিন হবে।

Link copied!