ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
Amar Sangbad
স্মার্টফোন আসক্তি

হুমকির মুখে শিশুদের ভবিষ্যৎ

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ১৬, ২০২৩, ০৯:২৭ এএম

হুমকির মুখে শিশুদের ভবিষ্যৎ
  • সন্তানদের আসক্তির ব্যাপারে অবগত নন অনেক অভিভাবক
  • ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য
  • চিকিৎসকরা স্মার্টফোন আসক্তিকে মাদকের সঙ্গে তুলনা করছেন
  • গবেষণা বলছে, মা-বাবার অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে সন্তানরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে

সচেতনতা তৈরিতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে
—ড. তারিক আহসান
অধ্যাপক, ঢাবি

দুই থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত শিশুদের মোবাইল থেকে বিরত রাখতে হবে
—ডা. রেদওয়ানা  হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, এসএমসি

খলিল ও সালমা দম্পত্তি মেয়ে মাইশা। এক বছর থেকে শিশু কান্না করলেই স্মার্টফোন দিতেন তারা। স্মার্টফোন দেখেই কান্না থেমে যেত মাইশার। একইভাবে খেতে না চাইলেও ফোন দেখতে দিয়ে মেয়েকে খাবার খাওয়াতেন। ফলে পাঁচ বছরের শিশুটি এখন এলোমেলো কথা বলে। স্কুলে ভর্তি করালেও ঠিকমতো অন্যদের সাথে মিশতে পারে না। আর এ কারণে মেয়ে মাইশার চিকিৎসার জন্য স্পিচ এইড বাংলাদেশ এসেছেন তারা। এ রকম সমস্যাগ্রস্ত অনেক পরিবার এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। স্মার্টফোন আসক্তি থেকে বেশির ভাগ শিশুর কথা না বলা বা অসংলগ্ন কথা বলার সমস্যা দেখা যায়। স্পিচ এইড বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর কৌশিক কবির জানান, প্রতি মাসে অর্ধশতকের মতো এমন নতুন রোগী পায় প্রতিষ্ঠানটি। 

চিকিৎসকরা বলছেন, স্মার্টফোনের অনেক উপকার থাকা সত্ত্বেও এর অপব্যবহারের বিষয়টি সর্বত্র গুরুত্ব পাচ্ছে। অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। অল্প বয়সে বেশিক্ষণ স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চোখের কর্নিয়া-রেটিনাসহ বিভিন্ন অংশ। মোবাইলফোন আসক্তি শিশুদের ভাষা বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা, মনোযোগহীনতা তৈরি করে। স্মার্টফোনের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে নেশার জন্ম দেয়। অক্সিকনটিন জাতীয় পেইনকিলারের সঙ্গে এই নেশার তুলনা করা যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা। যা সেবনে আফিম সেবনের মতো প্রভাব সৃষ্টি করে এবং তা সাধারণত ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটালেও একইভাবে একাকিত্বের জন্ম দেয়, সামাজিকতা নষ্ট করে। 

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের উপর প্রভাবের বিষয়টি গবেষণা করেন। ৪০০ জন প্রি-স্কুল শিশুর (তিন থেকে পাঁচ বছর) উপর পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৯২ শতাংশ শিশু পিতা-মাতার স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং ৮ শতাংশ শিশুর ব্যবহারের জন্য পৃথক স্মার্টফোন আছে। বাংলাদেশে শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় তিনগুণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মা ও বাবার প্রতিদিনের স্মার্টফোনের ব্যবহারের মাত্রাও সন্তানদের স্মার্টফোনে আসক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা, যেসব মা ও বাবা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা বা তার বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাদের সন্তানরা স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৯০ গুণেরও বেশি। এ ছাড়াও পেশাজীবীদের সন্তানরা অধিকহারে স্মার্টফোন আসক্তিতে ভুগছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মা-বাবা সন্তানদের সময় দিতে পারছেন না। একইভাবে জানা যায়, যে পরিবারের আয় ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশি, তাদের শিশুরা অধিক হারে স্মার্টফোনে আসক্ত। 

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদের একজন হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুল হক। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, স্মার্টফোন আসক্তি বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি প্রি-স্কুল শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং জ্ঞান বিকাশে নানা ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুরা স্মার্টফোনে আসক্ত নয় এমন শিশুর তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও ২৩০ গুণ বেশি শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ মা বিশ্বাস করেন, তাদের সন্তান স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনেক কিছুই শিখতে পারে। পর্যবেক্ষণে জানা যায়, শিশু কান্না করছে, খেতে চাচ্ছে না কিংবা নিজের কাজ করার জন্য শিশুকে স্মার্টফোন দিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়। স্বভাষা কিংবা ভিন্ন ভাষায় শিশু কার্টুন দেখিয়ে শান্ত করা হয়। শুধু শিশুরাই মোবাইল আসক্ত নয়, এ মহামারিতে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এমনকি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছেন। বয়স ভেদে স্মার্টফোন ব্যবহারে আগ্রহের ভিন্নতা রয়েছে। শিশুরা সাধারণত কার্টুন পছন্দ করে। কিশোর ও তরুণ বয়সিরা গেমস খেলে। আর তরুণ ও যুবক বয়সে খেলা দেখা, চ্যাটিং ও সিনেমায় আগ্রহ থাকে। তবে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অনেকেই অশ্লীলতায় পা বাড়ায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার ও জীবন গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক যুবক। 

সাজ্জাদুল ইসলাম নামে ঢাবির সাবেক একজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেভাবে পড়াশোনাও করছিলাম। কয়েকদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় চ্যাটিং, গেমসে জড়িয়ে যাই। এরপর পর্নেও আসক্ত হই। তখন কোনো ধরনের সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে মন দিতে পারতাম না। মোবাইল ছাড়া কিছুই ভালো লাগত না। ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দুই বছর এভাবেই কেটে যায়। তৃতীয় বর্ষ থেকে বের হতে চেয়েছি। প্রায় ভাবতাম আজকের পরই ছেড়ে দেবো। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার মোবাইলে হারিয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেল আরো দুবছর। মোবাইল আসক্তিতে ওনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ধ্বংস হয়েছে বলে জানান তিনি। সন্তানদের স্মার্টফোন আসক্তিতে অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় আছেন। নিজের ১২ বছরের সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারের কথা জানিয়ে আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আহমেদ বলেন, আত্মীয়দের দেখাদেখি ওকে মোবাইল কিনে দিয়েছিলাম। এখন সারা দিন গেমস ছাড়া কিছুই বোঝে না। পড়াশোনার কথা বলাও যায় না। কিছু বললেই মেজাজ দেখায়, খাওয়া বন্ধ করে দেয়।  

জানা যায়, পৃথিবীতে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দ্বিগুণ বেড়েছে। বর্তমান পৃথিবীর স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৬৫ কোটি। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনসংখ্যার মোট ৩২ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারী পাঁচ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করবে। শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেলের সাইক্রিয়াট্টিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানা হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘দুই থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত শিশুদের মোবাইলের ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। এ সময় অভিভাবকরা শিশুকে বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী কিনে দিতে পারেন। তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করতে হবে। তবে সন্তানদের অপ্রয়োজনীয় কার্টুন না দেখিয়ে শিক্ষণীয় প্রোগ্রাম দেখানো যেতে পারে। সেটিও সর্বৃোচ্চ এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি নয়।’ 

আসক্তি থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষায় পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘সমাজের মানুষদের স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতনতার আগেই তাদের হাতে এটি চলে এসেছে। কোভিড মহামারিতেও স্মার্টফোনের অপব্যবহার আমাদের সন্তানদের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সমাজে ব্যাপক আকারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্মার্টফোনে আসক্তদের কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পারিবারিক কন্ট্রোলটাও খুবই জরুরি। সন্তানদের নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত স্মার্টফোন থেকে বিরত রাখতে হবে। তবে একাডেমিক প্রয়োজনে মা-বাবার মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে এ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক লেখা টেক্সট বইয়ে উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে আলোচনার করা যেতে পারে বলে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। 

 

Link copied!