ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

পাথর লুটে প্রশাসনই দায়ী : দুদক

আতিকুর রহমান নগরী, সিলেট থেকে

আতিকুর রহমান নগরী, সিলেট থেকে

আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১২:১১ এএম

পাথর লুটে প্রশাসনই দায়ী : দুদক
  • প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকায় ১০৩ জন
  • যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাথর উদ্ধার, আটক ২

সাদাপাথর লুটপাট ঠেকাতে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। তিনটি দৃশ্যমান অভিযান ছাড়া লুটপাট রোধ করতে বা ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কোনো সফলতা নেই প্রশাসনের। 

একাধিক ভিডিও ফুটেজ ও ভিজ্যুয়াল গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের সামনেই পাথর লুট হচ্ছে। তিনি নির্বিকার, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুটের দৃশ্য দেখছেন। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অ্যাকশনেও যাচ্ছেন না। তাকে অনেকটা নির্বিকার দেখা গেছে। যেটা প্রমাণিত দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

দুদকের দাবি, সিলেটের সাদাপাথর লুটপাটে প্রশাসনও দায়ী। স্থানীয় প্রশাসন নিজের দায় এড়াতে পারে না। তাদের চোখের সামনেই এতবড় কাণ্ড ঘটে গেছে।

এদিকে সাদাপাথর হরিলুটে জড়িত প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকায় ১০৩ জনের নাম উঠে এসেছে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর লুটেরাদের ধরতে অভিযান নামবে প্রশাসন। এমন তথ্য ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে, পুলিশ-বিজিবির মতো অনৈতিক সুবিধা পেত প্রশাসনও। নিয়মিত মাসোহারা যেত উপজেলা থেকে উপর মহল পর্যন্ত। এ কারণে পুরো সাদাপাথর, সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা, ধলাই নদী, শাহ আরেফিন টিলা লুটেপুটে সাবাড় করে দিলেও তারা ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। লুট হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে টনক নড়ে। এই ব্যর্থতায় ফেঁসে যেতে পারেন কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার। 

তবে নিজের ব্যর্থতা মানতে নারাজ আজিজুন্নাহার। তিনি বলেন, ‘আমার সময় থেকে লুটপাট শুরু হয়নি। লুট আগে থেকে চলছে। আমি এসে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। এজন্য দায়টা আমার ওপর দেয়া যাবে না।’ তিনি এর চেয়ে বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি দুদকের বক্তব্য সম্পর্কেও কিছু বলতে চাননি। পরামর্শ দেন, ‘উপজেলা প্রেস ক্লাবে আমি সব তথ্য দিয়ে দেব। আপনি সেখান থেকে সংগ্রহ করে নেবেন।’

আজিজুন্নাহার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। ১৫ জানুয়ারি থেকে তার কার্যকাল শুরু হয়। আর সাদাপাথর লুটপাট শুরু হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে। তবে চূড়ান্ত খামচি বসানো হয় গত ৪ থেকে ৫ মাসের, যে সময় উপস্থিত ছিলেন আজিজুন্নাহার।

পাথর লুটের বিষয়টি দেশব্যাপী আলোচিত হলে গত ১৩ আগস্ট বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় দুদকের একটি দল। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাত।

তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর থেকে নজিরবিহীন পাথর লুটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের তথ্য পান। প্রাকৃতিক এই সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত ছিল, যেটা তারা করেন নাই। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রবাসীদের উদ্যোগে যৌতুকবিহীন গণবিয়েতে তার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে কোম্পানীগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন ইউকে। জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (অনূর্ধ্ব-১৭) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা দলের খেলোয়াড়দের যাতায়াত ভাতা ও দৈনিক ভাতা বিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে এসব অভিযোগ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। 

ইউএনও আজিজুন্নাহারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র থেকে ওঠা খাস কালেকশনের টাকা নয়-ছয় বা আত্মসাৎ করা। পর্যটনকেন্দ্রে যেতে যেসব নৌকা ও গাড়ি পার্কিংয়ে খাস কালেকশন করা হয়, তার হার বাস্তবে অনেক বেশি হলেও দেখানো হয় সামান্য। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের হাতে সোনালী ব্যাংক, কোম্পানীগঞ্জ শাখায় জমা দেয়া একাধিক খাস আদায়ের রশিদ এসে পৌঁছেছে। যেখানে নামমাত্র টাকা জমা দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

পর্যটন উন্নয়ন তহবিলে খাস কালেকশন ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে জমা দেয়ার রশিদ ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার টাকার, ২৯ ডিসেম্বর ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু তার দায়িত্ব নেয়ার পর তা কমতে থাকে। ১৬ জানুয়ারি তারিখে ৬৫ হাজার ২৮০ টাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি ৬৬ হাজার ৮১০ টাকা এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের রশিদে দেখা যায় খাস কালেকশন জমা হয়েছে মাত্র ৬৩ হাজার ৪৬০ টাকা।  

একাধিক সূত্র জানায়, সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি নৌকা থেকে ট্রিপপ্রতি নেয়া হয় ৪৫০ টাকা করে। দৈনিক গাড়ি পার্কিং এবং নৌকা থেকে গড়ে খাস কালেকশন হয় কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা। অথচ তহসিলদারের মাধ্যমে জমা দেয়া হয় তার চেয়ে অনেক কম। এই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়। 

উপজেলা প্রশাসনের এসব খাস কালেকশনের দায়িত্ব পালন করেন তহসিলদার গিয়াস উদ্দিন এবং ভূমি অফিসের নৈশপ্রহরী সুকুমার। খেটে খাওয়া পরিবারের সুকুমার আজ অদৃশ্য ইশারায় টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন। গ্রামের বাড়িতে বানিয়েছেন অট্টালিকাসম প্রাসাদ। উপজেলা সদর ও জেলা শহরেও তিনি বাসাবাড়ির মালিক। 

সূত্রের দাবি, বালুমহাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের নামেও আসে বড় অংকের কালেকশন। ধলাই নদী, বাঙ্কার সংরক্ষিত এলাকা, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, উৎমা ছড়া, শাহ আরেফিন টিলা, কালাইরাগ পাথর ও বালু মহাল থেকে দৈনিক হারে অর্থ কালেকশন করা হয় উপজেলা প্রশাসনের নামে। আর এই কালেকশন হয় মূলত  নৈশপ্রহরী সুকুমারের মাধ্যমেই। 

এদিকে জাতীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সাদাপাথর লুটপাটে জড়িতদের নাম ও পরিচয় প্রকাশের পরও মামলায় তাদের নাম না উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা পরিচয় দেয়ায় সমালোচনা করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লিখছেন কেউ কেউ। স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসকের অফিস সাদাপাথর লুটের সঙ্গে কারা জড়িত তার একটি তালিকা করেছে।

এটি প্রকাশ করা হয়নি। জেলা প্রশাসনে তালিকা থাকা ও সংবাদপত্রে লুটেরাদের নাম প্রকাশের পরও কেন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হলো প্রশ্ন তাদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি। খনিজ সম্পদ অধিদপ্তর শুক্রবার পাথর লুট ও চুরির ঘটনায় দেড় হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছে কোম্পানীগঞ্জ থানায়। স্থানীয়দের দাবি, সরকারিভাবে প্রকাশ করা হোক লুটেরা এবং তাদের সহযোগীদের নাম-পরিচয়। 

পাথর লুটে ১০৩ : সিলেটের সাদাপাথর বর্তমানে টক অব দ্য কান্ট্রি। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আর আগ্রহের শেষ নেই। এবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর লুটে জড়িত ১০৩ জনের নাম দিয়ে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তালিকা যাচাইুবাছাইয়ের কাজ চলছে। এরপরই তালিকা হাতে নিয়ে পাথর লুটকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হবে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।  

তিনি বলেন, ‘পাথর লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের একটি প্রাথমিক তালিকা করেছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একটা তালিকা তৈরি হয়েছে। এটি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত সব পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে যেসব অভিযুক্ত শনাক্ত হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, পাথর লুটপাটকারীদের তালিকায় লুটপাটে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রাজনৈতিক দলের নেতা ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা আছেন। পাশাপাশি লুটপাটে ব্যবহূত বারকি নৌকার মালিক এবং পাথর ক্রয়-বিক্রয়ে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরাও আছেন।

তবে, শনিবার ভোরে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের নাম ওই তালিকায় আছে কী-না তা নিশ্চিত করতে পারেননি কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। তিনি বলেন, শুক্রবার দায়ের হওয়া খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাথর উদ্ধার, আটক ২

সিলেটের সালুটিকর এলাকায় ক্রাশার মিলের আঙ্গিনায় মাটিচাপা দেয়া লুটের ১১ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী। গতকাল রোববার সকাল থেকে সাদাপাথর এলাকার পাথর চুরি ও পাথর লুটপাটের ঘটনায় সালুটিকর এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আরডিসি আশিক মাহমুদ কবির। 

অভিযানকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করা হয়। জানা যায়, রোববার সকাল থেকে সিলেটের ধোপাগুল সংলগ্ন সালুটিকর ভাটা এলাকায় একটি ক্রাশার মিলের আঙ্গিনায় মাটিচাপা অবস্থায় পাথরের সন্ধান পান যৌথবাহিনী। এ সময় আনুমানিক ১১ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করা হয়েছে। সিলেট জুড়েই আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এ সময় তার নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন।

এর আগে শনিবার সিলেটের ধোপাগুল এলাকার বসতবাড়ি ও ক্রাশার মিলে অভিযান চালিয়ে আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে প্রশাসন।

Link copied!