Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪,

শর্ত মানছে না মেলা কমিটি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

মার্চ ২৮, ২০২৪, ১২:২৫ এএম


শর্ত মানছে না মেলা কমিটি
  • ঢাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খোলা মাঠে চলছে মেলা
  • ইনডোরে আয়োজনের কথা বলেই নেয়া হয় অনুমতি   

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন কিংবা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মেলার আয়োজন চলছেই। কোথাও স্বাধীনতা দিবস, কোথাও আসন্ন ঈদ, কোথাও আবার বৈশাখ উপলক্ষে এসব মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজিত এসব মেলার অধিকাংশই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে বলা আছে, যেহেতু রমজান চলমান সেহেতু ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক রাখাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতেই এসব মেলা ইনডোরে আয়োজনের কথা বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এবার খোলা মাঠে মেলা আয়োজনের অনুমতিই দেয়া হয়নি। যারাই মেলা আয়োজন করবে, ইনডোরে আয়োজন করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কখনোই এসব মেলার আয়োজনের অনুমতি নেই। কারণ এটি আইনেই নিষিদ্ধ রয়েছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোনো রকমের মেলার আয়োজন করা যাবে না— এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনে বলা আছে।

যদিও বাস্তব চিত্র সব আইন ও নিয়মের বিপরীত। খোলা মাঠেই চলছে মেলার আয়োজন। কোথাও মেলা চলছে, কোথাও আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ এলাকায়ই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। অনুমতির বালাই নেই এসবে। ঢাকায় অধিকাংশ মেলায় আয়োজকদের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে— বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যদিও বাণিজ্য  ষ এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত মেলা আয়োজনের অনুমতি পেয়েছে মাত্র দু’-চারটি। অথচ মেলা আয়োজন হয়েছে তারও কয়েকগুণ বেশি। এদিকে অনিয়মের মধ্য দিয়ে মেলা আয়োজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রয়েছে অভিযোগের অপেক্ষায়। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।        

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার সংলগ্ন খালি মাঠে আয়োজন করা হয়েছে ৪৫ দিনব্যাপী দেশীয় জামদানি শিল্পপণ্য ও বৈশাখী বাণিজ্যমেলা-২০২৪। মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন অ্যান্ড জামদানি সোসাইটি। গত ২৪ মার্চ মেলাটির উদ্বোধন করা হয়। আয়োজকরা তাদের প্রচারের ব্যানারে উল্লেখ করেছেন— বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিএমপির অনুমতিক্রমে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, খোলা মাঠে মেলার আয়োজন করবে না— এমন নিশ্চয়তা দেয়ার পরই মেলার আয়োজনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ইনডোরে এসব মেলা আয়োজন করতে হবে এবং তথ্য-প্রমাণসহ ইনডোরে আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে— এমনটি বলা আছে। তা ছাড়া অনমুতি পাবে না কেউই। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের আজমপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠের সামনেও খোলা মাঠে মেলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

শুধু উত্তরা নয়, মিরপুরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন মাঠে আয়োজন করা হয়েছে মেলার। মিরপুর-২ এর ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে রনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয়েছে ঈদ আনন্দ ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। বাংলাদেশ বুটিক্স এবং ক্ষুদ্র শিল্প লিমিটেডের উদ্যোগে আয়োজিত ওই মেলার উদ্বোধন করা হয় পয়লা রমজান (১২ মার্চ)। মিরপুর-১ এর দারুসালাম এলাকার গোলারটেক মাঠেও আয়োজন করা হয়েছে ঈদ বস্ত্র, হস্ত ও কুঠিরশিল্প মেলা-২০২৪। দারুস সালাম থানা সংলগ্ন মাঠে ওই মেলাও উদ্বোধন করা হয় গত ১২ মার্চ। এ ছাড়াও সাভার, আশুলিয়া, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশেই মেলা আয়োজনের অনুমতিতে রয়েছে গলদ।

এসব মেলার আয়োজন করে এমন একটি সূত্র জানায়, শুধু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষাই নয়, ট্রেড লাইসেন্সসহ মেলা আয়োজনে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রেও গলদ রয়েছে। জেলা পর্যায়ে বিশেষ করে এসব অনিয়মের ধার ধারে না জেলা প্রশাসন। জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ মেলাই শতভাগ নিয়মবহির্ভূতভাবে আয়োজন করা হয়েছে। এসব নিয়ে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে কেউই কোনো কথা বলে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, আয়োজকরা খুবই ধুরন্ধর। তারা সব মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে ‘সংলগ্ন মাঠ’ নামে একটি কমন শব্দের ব্যবহার করেন। অথচ সংলগ্ন মাঠ লিখেও মেলা আয়োজনের অনমুতি পাওয়ার কথা নয়। কারণ এবার খোলা মাঠে আয়োজন নিষেধ করা আছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাঠে তো কোনো সুযোগই নেই।      

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন (রপ্তানি-৭ শাখা) আমার সংবাদকে বলেন, রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ একাধিক বিষয় মাথায় রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খোলা মাঠে মেলা আয়োজন আপাতত ঈদ নাগাদ বন্ধ রেখেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা আয়োজনের বিরুদ্ধে আইন থাকায় কখনোই এর অনুমতি দেয় না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে যেসব মেলার আয়োজন হচ্ছে বা মন্ত্রণালয়ের কাছে আয়োজনের অনমুতি চাইছে তাদের মধ্য থেকে শুধু যারা ইনডোরে আয়োজন করবেন তাদেরই অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যেমন— কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব এসব স্থানে যারা আয়োজন করবেন তারাই কেবল অনুমতি পাবেন। জানতে চাইলে, এখন পর্যন্ত ঠিক কতটি মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে ঢাকায় তার সঠিক সংখা জানাতে পারেননি তিনি।

তবে আমার সংবাদকে তিনি বলেছেন, খোলা মাঠে যেহেতু অনুমতি আপাতত দেয়া হচ্ছে  না সেহেতু খোলা মাঠে কেউ মেলার আয়োজন করলে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলার আয়োজনের সঠিক তথ্য যদি পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তা বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে এসব মেলার অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। সেগুলোর বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে দেশের কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।  
 

Link copied!