ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরজীবন

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

জুলাই ১৩, ২০২৪, ১২:২৯ এএম

জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরজীবন
  • পুরান ঢাকার বাসাবাড়িতে পানিঢুকে পড়েছে
  • পানি ঢুকেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা
  • জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ডিএনসিসির পাঁচ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী

ঢাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে রেকর্ড বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে নগরজীবন। গতকাল সকাল থেকে ছয় ঘণ্টার ঝুম বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ সড়ক ও অলিগলি। এ সময় বৃষ্টির মাত্রা ছিল ১৩০ মিলিমিটার, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে রেকর্ড বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে সড়কে চলাচলরত যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়িগুলো বিকল হয়ে পড়ে। মাঝ সড়কে গাড়ি বিকল হওয়ায় সৃষ্টি হয় যানজটের। সব মিলিয়ে বৃষ্টি, যানজট আর জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন নগরীর বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়কে সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্রই দেখা গেছে। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কুলার রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড, মিরপুর মাজার রোড ও সেগুনবাগিচা এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। এতে যানবাহন চলাচল হয় বিঘ্নিত। মতিঝিল এলাকার সবকটি সড়ক ও ফকিরাপুলের অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। ধানমন্ডি এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য গাড়ি বিকল হয়ে সড়কের মাঝে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

আবেদিন নামের একজন গাড়িচালক বলেন, সকাল ৯টার দিকে শ্যামলী থেকে ধানমন্ডি এলাকায় আসি। ধানমন্ডি আসতেই ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরও গাড়ি সচল করতে পারছি না। সেগুনবাগিচায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বেশিরভাগ সড়কে হাঁটুপানি। ওই এলাকায় চলাচলরত যানবাহনগুলো বিকল হয়ে সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দাসহ সড়কে বের হওয়া পথচারীরা। গতকাল শুক্রবার সকালের বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত পুরান ঢাকার বেশিরভাগ সড়কে হাঁটুপানি আটকে থাকতে দেখা গেছে।

এছাড়াও কিছু কিছু সড়ক এখনো কোমর সমান পানির নিচে রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার, নয়াবাজার, বাবুবাজার, বংশাল, মালিটোলা, নাজিরা বাজারের আশেপাশের সবগুলো সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আশেপাশের সবগুলো দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছুে। অনেক দোকান মালিক পানি সরানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবে ড্রেন দিয়ে নামছে না পানি। এছাড়াও মুদিদোকান, ওষুধের দোকান ও খাবার হোটেলসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান খুলতে পারছেন না বিক্রেতারা। তবে কিছু ওষুধ ও খাবার হোটেল খোলা থাকলেও সড়কে পানি থাকায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের কষ্ট যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

এদিকে, পানি না কমায় সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটো, মোটরসাইকেল, বাস, কার, অ্যাম্বুলেন্স ও রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। এছাড়া অতিরিক্ত পানির কারণে একাধিক বাস, সিএনজি অটো ও মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে মাঝ রাস্তায় বন্ধ হয়ে পড়ে। সে সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন বেশিরভাগ যানবাহন চালক। তবে এদিন পুরান ঢাকার সড়কে তীব্র আকার ধারণ করেছে বৃষ্টির পানির সঙ্গে যানজট। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া পুরান ঢাকার বাসিন্দা জাফর জানান, ‘সামান্য বৃষ্টিতে এভাবে পুরান ঢাকাকে আগে পানির নিচে দেখিনি। সবগুলো সড়কে এভাবে পানি থাকায় আমাদের কষ্টের শেষ নেই। দোকান মালিকরা বলেন, ‘এভাবে পানি না কমলে তো আমাদের লাখ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি, তারপরও পানি নামছে না। ড্রেনগুলোর অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঘেরা এলাকা নিউমার্কেট। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে জমে আছে বৃষ্টির পানি। আর এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাস্তার পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত নিচু ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির সময় উপচে সড়কের সব পানি প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভেতরে। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বই, জুয়েলারিসহ সবকিছুই ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু নিউমার্কেটই নয় বরং পার্শ্ববর্তী ধানমন্ডি নায়েম রোড, ঢাকা কলেজের আবাসিক এলাকা, আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় হাঁটু পানি। রাস্তায় ও গলিতে পানি জমে থাকার কারণে এসব এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকেওবের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন, সামান্য পথ যেতে রিকশা বা ভ্যানে উঠে যেতে হচ্ছে। আর পানির কারণে বেশি সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। নিচতলায় থাকা অধিকাংশ দোকানেই পানি প্রবেশ করেছে। 

আলিফ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, হঠাৎ এত বৃষ্টি হবে বুঝতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি এমন অবস্থা। দ্রুত দোকানে এসে কিছু জিনিস সরাতে পেরেছি। অধিকাংশই পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা তলানোর সঙ্গে মোহাম্মদপুরের কৃষি  মার্কেটেও ঢুকেছে পানি; তাতে সারি সারি করে রাখা চাল, চিনি আর ডালের বস্তা ডুবে গেছে। মার্কেটটি রাস্তা থেকে খানিকটা নিচুতে। পানি প্রবেশ ঠেকাতে এর গলির মুখগুলো উঁচু করে দেয়া। তবে গতকালের টানা বৃষ্টি এসবের কিছুই মানেনি। দুপুরের দিকে এ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বালতি আর ড্রাম নিয়ে মার্কেটের পানি বের করছেন ব্যবসায়ীরা। পানি আটকাতে গলির মুখে পেপার ও বস্তা দিয়ে আরও উঁচু করে দিয়েছেন। বিক্রি বন্ধ রেখে চাল-ডালের বস্তা বাঁচাতেই ব্যস্ত তারা। ছুটির দিন হলেও বেসরকারি চাকরিজীবী কিংবা খেটেখাওয়া মানুষ সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই জীবিকার টানে ঘরের বাইরে বের হয়েছেন। তবে ভারী বৃষ্টিতে তাদের অনেককেই বিপাকে পড়তে দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এখন সারা  দেশে যে কোনো মুহূর্তে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। দেশের পাঁচ বিভাগে ভারী বর্ষণের সঙ্গে দুই বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচ হাজারের অধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়াও ডিএনসিসির ১০ অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি)। প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে রয়েছেন ১০ জন কর্মী। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এতে বলা হয়, এরই মধ্যে প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনে কল্যাণপুরে ডিএনসিসির পাঁচটি পাম্প সকাল থেকে একযোগে কাজ করছে। ছয় ঘণ্টা একটানা ভারী বৃষ্টির ফলে জমে থাকা পানি অপসারণ হতে সময় লেগেছে। এখনো যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা রয়েছে, সেখানে কুইক রেসপন্স টিম পাঠিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সব এলাকার শাখা রাস্তাগুলো থেকে পানি সরাতে কাজ করছে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কুইক রেসপন্স টিম। কোথাও কোনো পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬ নম্বরে ফোন করে জানালে কুইক রেসপন্স টিম ব্যবস্থা নেবে। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশে প্রকৌশল বিভাগ, বর্জ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভোর থেকে কাজ করছে। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Link copied!