নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১০, ২০২৫, ১২:১২ এএম
টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। সময়ের সাথে সাথে সেই পরিস্থিতি এখন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ অন্তত ১০ জেলার নদ-নদীর পানি ক্রমশই বাড়ছে। ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে, বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার কাছাকাছি, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের নদীপাড়েও ভাঙনের খবর মিলেছে।
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যান চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পাহাড়ি জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সতর্কবার্তা দিয়েছে প্রশাসন। আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে ইতোমধ্যেই জেলায় জেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, তাৎক্ষণিক সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীও।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে সদর, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, এরই মধ্যে শত শত মানুষ সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। নদীর পাড়ে অন্তত ১৪টি পয়েন্টে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খুলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেবীদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, চকবাজার, বাকলিয়া, হালিশহরসহ একাধিক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে নগরজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় নগরবাসীকে সতর্ক থাকতে বলেছে সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
পাহাড়ি জেলাগুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে বলেও জানা গেছে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আশপাশের বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় ছোটখাটো ভূমিধসের খবরও মিলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনার বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। নদীপাড়ের লোকজনকে আগাম সতর্ক করেছে স্থানীয় প্রশাসন। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে পদ্মা ও বড়াল নদীর পাড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। বহু পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে পাহাড় ধস ও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। দ্রুতগতির পানিবৃদ্ধি ও সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরও দেশের বিভিন্ন জেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, চিকিৎসাসেবা ও উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে দেশের অন্তত ১০ জেলায় তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণে রয়েছে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে— এমন আশঙ্কা করছে আবহাওয়া ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা।