Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

ফসলে নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রকারী নতুন জিন আবিষ্কার

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

অক্টোবর ১০, ২০২২, ০২:৫৯ পিএম


ফসলে নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রকারী নতুন জিন আবিষ্কার

ফসলে নাইট্রোজেন নিয়ন্ত্রকারী নতুন জিন আবিষ্কার করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রাক্তন ছাত্র মো. নূরে আলম সিদ্দিকী। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রপ মলিকুলার জেনেটিক্সের উপর তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

নূরে আলম সিদ্দিকী ২০০৯ সালে হাবিপ্রবি‍‍`র কৃষি অনুষদ থেকে স্নাতক এবং ২০১২ সালে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিলো Genetice variation in root architecture traits for nitrogen use efficiency in wheat and barley.

নূরে আলম সিদ্দিকী তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়ে জানান, মাটিতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেনের উপস্থিতি গাছ তথা উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি হলে তা দ্রবীভূত হয়ে এক সময় বাতাসে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কৃষকেরা অধিক ফসল উৎপাদনের আশায় মাটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় নাইট্রোজেন (ইউরিয়া সার) প্রয়োগ করে। যার ফলে অব্যবহৃত কিছু নাইট্রোজেন, গ্যাস আকারে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে করে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। আবার কিছু নাইট্রোজেন শোষিত বা লিচিং হয়ে  হয়ে ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে যা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি স্বরূপ। এজন্য ফসলের জমিতে নাইট্রোজেনের ব্যবহার কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেটি নিয়ে গবেষণা করা জরুরি। যদি সেটি করা যায় তাহলে একদিকে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহারে কৃষকের যে আর্থিক অপচয় তা কমবে। অন্যদিকে পরিবেশ ও পানি দূষণ রোধ সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন,  গাছ সাধারণত শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে। সেই পুষ্টি উপাদান গাছের উপরের অংশে (কান্ড ও পাতায়) পৌঁছে দেয়ার জন্য নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার হিসেবে বিভিন্ন ধরনের জিন কাজ করে। আমরা আমাদের গবেষণায় উদ্ভিদে নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার হিসেবে সর্বপ্রথম ৬০টির মতো জিনের সন্ধান পেয়েছি। এর মধ্যে গম এবং বার্লিতে একই ধরনের একটি নাইট্রেট ট্রান্সপোর্টার জিন পেয়েছি। এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং কার্যাবলী নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি জানান, গবেষণায় আমরা দেখেছি এই জিন গাছের মধ্যে উপস্থিত থাকলে নাইট্রোজেন বেশি দিলে সেটি তা সক্রিয়ভাবে (নাইট্রেট) গ্রহণ (আপটেক) ও ট্রান্সপোর্ট করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন মলিকুলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই জিনের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় করা হয় তখন কম পরিমাণ নাইট্রোজেন দিলেও উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধির মাধ্যমে নাইট্রেট গ্রহণ ও ট্রান্সপোর্ট ত্বরান্বিত করে। মাঠ পর্যায়ে কম পরিমাণ নাইট্রোজেন প্রয়োগ করেও দেখা গেছে এটি উদ্ভিদের নাইট্রোজেন ব্যবহার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে যদি এটি নিয়ে আরও গবেষণা করা যায় তাহলে মাটিতে নাইট্রোজনের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে এবং কৃষকেরাও আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হতে পারবেন।    

উল্লেখ্য, মো. নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৮৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার অর্ন্তগত সদর উপজেলাধীন কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের খোলারপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১১ সালে জাপানের জাইকা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক JENESYS (Japan East Asia Network for Exchange of Students and Youth) প্রোগামে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে জাপানের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনসহ বেশ কয়েকটি সেমিনারে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে ২০১২ সালে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়), জামালপুরে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রভাষক পদে এবং পরে ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ ও ২০২২ সালে যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক (এখনও যোগদান হয়নি) পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

২০১৮ সালে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ফেলোশিপ একাডেমিক একচেঞ্জ (DAAD) নিয়ে তিনি জার্মার্নির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যান্ট মলিকুলার জেনেটিক্স বিষয়ের উপর পিএইচডি করার জন্য যান। সেখানে দীর্ঘ চার বছর অত্যন্ত সফলতার সাথে গবেষণা করার পর গত ৫ অক্টোবর ২০২২ তাঁকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়। এরআগে তিনি পিএইচডি গবেষণায় চমৎকার অগ্রগতির জন্য  ‘DAAD Outstanding Award’ লাভ করেন।

এছাড়াও, বিশ্বের স্বনামধন্য এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন জার্নালে তার ৫০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কতিপয় আর্ন্তজাতিক জার্নালের রিভিউয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে পরিচিত।

এআই

Link copied!