ঢাবি প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১০, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম
ঢাবি প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১০, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯-১০ সেশনে অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর দিকে আবেদন ফি ছিল
৩০০ টাকা। সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি ১ হাজার টাকা থেকে আরও ৫০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৫ বছরের ব্যবধানে
আবেদন ফি সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি কেন্দ্র থেকে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৯-১০ সেশনে অনলাইনে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করে। সেই বছর পাইলট প্রকল্প (পরীক্ষামূলক) হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন অনলাইনে শুরু করে। তখন অনলাইনে আবেদন ফি ছিল ৩০০ টাকা।পরবর্তী বছর ২০১০-১১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন অনলাইনে শুরু হয়।২০১০-১১ সেশনে প্রতিটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩০০ টাকা। যেখান থেকে অনলাইন সার্ভিস বাবদ টেলিটক অপারেটর ৩০ টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ২০ টাকা কেটে রাখতো। বাকি টাকা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করা হতো।
পরবর্তী সময়ে টেলিটক অপারেটর কোম্পানির পরিবর্তে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জনবল এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন।ফলে ২০১৫-১৬ অথবা ২০১৬-১৭ সেশনের দিকে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা করা হয়।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৪৫০ টাকা। কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছেন, সেবার প্রথমবারের মতো এমসিকিউ ভিত্তিক প্রশ্নের পাশাপাশি লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে।
করোনা মহামারীর পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৫০ টাকা। কারণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং হয়রানি এড়াতে পরীক্ষা কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ায় অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি হিসাব করতে হয়েছে।
করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) নির্দেশ দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি থেকে ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় দেখাতে হবে। এটা নিয়ে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক প্রতিবাদ করলেও তারা মানেনি। পরবর্তীতে ইউজিসির চাপেই আবেদন ফি মূলত ৬৫০ টাকা থেকে একবারে ১ হাজার টাকা করা হয়।ফলে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ফি আরও ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়।
পরের বার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষেও আবেদন ফি ১ হাজার টাকা বহাল ছিল।
এবার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ফি আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০ টাকা করা হয়েছে। কারণ সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে আবেদন ফির দশ শতাংশ অনলাইন ফি দিতে হবে। সে অনুযায়ী ১০০ টাকা হলেও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ৫০ টাকা কমিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে অনলাইন সার্ভিস ফি ৭০ টাকা ,ব্যাংকের সার্ভিস ফি ১২.৯৭ টাকা এবং ইউজিসির নির্দেশিত ৪০% সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ ৯৬৭.০৩ টাকা।
গত ১৫ বছরে আবেদন ফি সাড়ে তিন গুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনলাইন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি,বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া, অনলাইন সার্ভিস ফি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, "২০১৮-১৯ সালে যখন আমাদের আবেদন ফি ৩৫০ টাকা ছিল তখনো ১০ শতাংশ টেলিটককে দিতে হতো। পরবর্তীতে এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার ফলে ওই টাকা দিয়ে পরীক্ষার সবকিছুর যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সেখানে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়। তখন হয় ৪৫০ টাকা। এটা বাড়ানো হয়েছিলো মূলত পরীক্ষার আইটেমগুলোর জন্য। কারণ ওই টাকায় সব কিছু কেনা সম্ভব হচ্ছিলো না। এর পরে আমরা আবার বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে খরচ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ফি বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করি। এই ৬৫০ টাকা দিয়ে আমরা আটটি বিভাগেই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারতাম"।
ইউজিসির কারণে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বেড়েছে মর্মে তিনি আরও বলেন, "পরবর্তীতে ইউজিসি আমাদেরকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার যে আবেদন ফি, সেখান থেকে ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় দেখাতে হবে। এটা নিয়ে তখন আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু তারা মানেনি। পরবর্তীতে তাদের চাপেই আবেদন ফি মূলত ৬৫০ টাকা থেকে একবারে ১ হাজার টাকা করা হয়। আমরা প্রথমে ততটুকুই নিতাম, যতটুকু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। ইউজিসি এখনো যদি বলে যে ,কোনো আয় দেখাতে হবে না, তাহলে আমরা আবার ওই ৬০০ কিংবা ৬৫০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবো"।
আরএস