ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

অদম্য নারী লাইজুর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মে ২২, ২০২২, ০৮:২৬ পিএম

অদম্য নারী লাইজুর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প 

শিশু, শৈশব থেকে বৃদ্ধ! জীবনের প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আনন্দ, দুরন্তপনা, সুখের চাদর থেকে বেদনা। সব নিয়েই বড় হতে হয় প্রতিটি মানুষকে! সামাজিক নিয়মনীতি ও পারিবারিক বাঁধা পেড়িয়ে লক্ষ্য অর্জনে শ্রম, মেধা বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমে সুফল পাওয়া মানুষগুলো সফলতা পায় আকাশ সমান! স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গোণ্ডি পেড়িয়ে কর্মজীবনেও আলোকিত করে পরিবার, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রকে। জীবন যুদ্ধে সফলতা পাওয়া মানুষ গুলো মৃত্যুর পর বেচে থাকে যুগ যুগ! বাস্তব জীবনে সফলতা পাওয়া মানুষগুলোর জীবন নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান করতে আজ কম বেশি সবাই পছন্দ করে। কিন্তু সফতা পাওয়া মানুষগুলোর অর্থ সম্পদ পরিপূর্ণ ও সমাজে পূর্ণ সম্মান পেলেও প্রিয় মানুষের হারানোর আক্ষেপ থাকে আমৃত্যু। 

রাফেজা খাতুন লাইজু। একজন অদম্য নারী। সংসার জীবনে কঠোর পরিশ্রম, মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসীকতা ছিল আকাশ সমান। সংসার জীবনে স্বামীর জন্য সীমাহীন ভালোবাসা ও অক্লান্ত পরিশ্রম তাকে করে তুলেছেন অদম্য। স্থান করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের মনে। সংসার জীবনে স্বামীর জন্য তার সীমাহীন ভালোবাসা ও ত্যাগ স্মৃতির পাতায় বেচে থাকবে যুগ যুগ। 

১৯৬৬ সালে সিরাজগঞ্জ সদরে জন্ম গ্রহণ করেন রাফেজা খাতুন লাইজু। তার পিতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক এ, কে, ইফাজ উদ্দিন। লাইজু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি ১৯৮২ সালে সালেহা ইসাহাক স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে এইচ এসসি পাশ করেন। শিক্ষা জীবনের পর পারিবারিক ভাবে সংসার জীবন শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে দেলোয়ার হোসেনের নামের এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

দেলোয়ার হোসেন জাইকাতে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন এবং রাফেজা খাতুন লাইজু "বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি এডুকেশনে কর্মরত। তাদের সুখের সংসারে হটাৎ নেমে আসে কালো অন্ধকার। ১৯৯৯ সালে দেলোয়ারের দুটি কিডনীর সমস্যা দেখা দেয়। পরিক্ষার পর জানা যায় কিডনীর ৭৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ। স্বামীকে সুস্থ করতে রক্ত পরিশোধনের মত জটিল, কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন স্ত্রী লাইজু। একদিকে সংসার-সন্তান অন্যদিকে প্রিয়তম স্বামীর সুস্থতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে থাকেন তিনি। দেশ থেকে হতাশা আর এক বুক কষ্ট নিয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত লেক সাইড হাসপাতালের কিডনী বিভাগ কর্নাটোকা নেফরোলজি ট্রান্সপ্লান্ট ইনষ্টিটিউটের প্রধান ও কিডনী সংস্থাপন বিশেষজ্ঞ ডা. এস সুন্দরের পরামর্শ গ্রহণ করেন। ডা. এস সুন্দরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয় দেলোয়ার হোসেনের চিকিৎসার জন্য। যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২০০৩ সালের ২০ এপ্রিল স্বামীকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে যান তিনি। দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৬ মে একই সাথে ২ জনের কিডনী সংস্থাপনের সফল অপারেশ সম্পন্ন হয়। সুস্থ হয়ে দুজন নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেন।

সুস্থ স্বামী এবং সন্তানকে নিয়ে ফের সুখের সংসার শুরু করেন রাফেজা খাতুন লাইজু। অফিস, পরিবার ও স্বামী-সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার আবারও স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ২০০৯ সালে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান স্বামী দেলোয়ার। তাকে রেখে যান কষ্টের নদীতে। হয়তো সেদিন  লাইজু অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের কষ্ট গুলোকে আলিঙ্গণ করেছিলেন প্রাণ ভরে। 

স্বামী মৃত্যুর পর বুকভরা কষ্ট আর বেদনা নিয়ে জীবন যাত্রা শুরু করে লাইজু। নবম শ্রেণী পড়ুয়া সন্তান লাবিবকে নিয়ে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচবার প্রতিজ্ঞা করেন দৃঢ়তার সাথে। সমাজের রক্তচোক্ষু উপেক্ষা করে অদম্য গতিতে শুরু করেন জীবন তরী। শক্ত হাতে সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিলে তিলে গড়ে তোলেন সন্তান লাবিবকে। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে লাবিব নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (বাংলাদেশ) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। এরপর প্রথম কর্মজীবন হিসেবে আমেরিকান সফট্ওয়ার ফার্মে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি করেন।

বর্তমানে লাবিব হোসন আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (মিটলাইফ) এ সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি করছেন। রাফেজা খাতুন লাইজুও একটি ন্যাশনাল এনজিওতে কর্মরত। বিধাতার লেখা বোঝা অনেক কঠিন। জীবনভর স্বামীকে নিয়ে যুদ্ধা করা লাইজুও এখন কিডনী সমস্যা ভুগছেন। অনেকটা সংগ্রাম করে চালাচ্ছেন নিজেকে। তবুও তার আক্ষেপ স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারাটাই।

আমারসংবাদ/কেএস 

Link copied!