Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫,

ট্রান্সশিপমেন্ট সংকট পেরিয়ে আকাশপথে বিজয়ের পথে বিমান কার্গো

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

জুন ৩, ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম


ট্রান্সশিপমেন্ট সংকট পেরিয়ে আকাশপথে বিজয়ের পথে বিমান কার্গো

বাংলাদেশের আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি হলো ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতি বছর গড়ে ২,১০,০০০ মেট্রিক টন রপ্তানি এবং ১,২১,০০০ মেট্রিক টন আমদানি পণ্য এই বিমানবন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বছরে রপ্তানি হয় গড়ে মাত্র ৩,৩৫২ মেট্রিক টন এবং আমদানি ২,৯২০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দেশের আকাশপথের বাণিজ্য কার্যক্রম প্রায় পুরোটাই ঢাকার উপর নির্ভরশীল। 

এর বাইরেও কিছু পণ্য সড়ক পথে ভারতে পরিবহন করে সেখান থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট করা হতো, ভারত যখন হঠাৎ করে বাংলাদেশের পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়, তখন রপ্তানিকারকরা কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। 

কিন্তু ভারতীয় এই সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও থেমে থাকেনি বাংলাদেশ হতে আকাশ পথে পণ্য পরিবহন বরং এটি বাংলাদেশর আকাশ পথে পণ্য পরিবহনের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

সাময়িক এই সংকটময় সময়েই এগিয়ে আসে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশ, রপ্তানিকারকগণ এবং  এই উদ্যোগের প্রাথমিক ধাপে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। 

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ফ্রেইটার অপারেশনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। এ লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে সিলেট বিমানবন্দরে কার্গো সেবার জন্য বাধ্যতামূলক Safety and Security Compliance নিশ্চিত করতে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং UK থেকে RA3 সার্টিফিকেশন ভেলিডেশন করা হয়, যা ২০২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সিলেট থেকে স্পেনের জারাগোজা গন্তব্যে প্রথম এয়ার ফ্রেইটার অপারেশন আনুষ্ঠানিভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে মে মাস পর্যন্ত সপ্তাহে ১ টি করে ডেডিকেটেড কার্গো ফ্রেইটার পরিচালনা করা হচ্ছে। 

জুন ২০২৫ থেকে সপ্তাহে ২ টি করে ফ্রেইটার পরিচালিত হবে। বর্তমানে সপ্তাহে অন্তত চারটি ফ্রেইটার পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের

এছাড়া চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকেও কার্গো ফ্রেইটার অপারেশন চালুর প্রস্তুতি চলছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে এবং নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রস্তুত রয়েছে। একইসাথে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে-কক্সবাজার বিমানবন্দর। সুদৃঢ় অবকাঠামো ও সম্প্রসারিত রানওয়ে সুবিধার মাধ্যমে এটিকে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। 

ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু হওয়ায় এবং চট্টগ্রাম থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৮০ কিলোমিটার হওয়ায় এখানে কম খরচে ও কম সময় কার্গো পরিবহণ সম্ভব। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন  বিমানের জনবল, কার্গো ওয়্যারহাউজ এবং হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম, যার প্রস্তুতি নিয়েও এগিয়ে চলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

এদিকে ঢাকায় নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। অত্যাধুনিক এই টার্মিনাল চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্গো পরিচালনা সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়বে। ২০১৯ সালে যেখানে মোট আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কার্গো পরিবহনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন, ২০২৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্ভাব্য এয়ার কার্গো পরিবহণ হবে প্রায় ৬৬৩ হাজার মেট্রিক টন। এই প্রস্তুতি ও রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, যারা নতুন কার্গো টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে আগেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন কার্গো টার্মিনালের জন্য ৩৩৫টি হাইড্রোলিক হ্যান্ড ট্রলি, ৮টি টো ট্রাক্টর, ১৮টি মিনি ফর্ক লিফট, ১৪টি ফর্ক লিফট এবং ৬টি বাগিসহ— মোট ৩৮১টি আধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম সংযোজন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যার মধ্যে সিংহভাগ সরঞ্জাম ইতোমধ্যে সংযোজিত হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের কার্গো বিভাগ রেকর্ড পরিমান আয় করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা হিসেবে RA3 (Regulated Agent Third Country) এবং ACC3 (Air Cargo or Mail Carrier operating into the European Union from a Third Country Airport) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। এই সার্টিফিকেশন দু’টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং UK-তে কার্গো পাঠানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা বিমানের সক্ষমতা ও মান বজায় রাখার প্রতীক।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিমান কার্গো বিভাগ সিডিউল ফ্লাইট এ সাথে সাথে প্রতি বছর গড়ে ২,১০০টি নন সিডিউল কার্গো চার্টার ফ্লাইট দক্ষতার সাথে হ্যান্ডলিং সম্পন্ন করে, যা এর কার্যকর অপারেশনাল সক্ষমতা এবং বৈশ্বিক এয়ার কার্গো পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতিফলন।

ভবিষ্যৎ উন্নয়নমূলক কৌশলের অংশ হিসেবে, বিমান কার্গো বর্তমানে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার, রয়েল ডাচ এয়ার, এয়ার ফ্রান্সসহ অনন্যা স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের সাথে স্পেশাল প্রোরেট এগ্রিমেন্ট (SPA), ব্লক স্পেস এগ্রিমেন্ট (BSA), কোড-শেয়ারিং এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে কার্গো নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, পরিবহন ক্ষমতার সর্বোত্তম ব্যবহার এবং উন্নতমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।একই সাথে ঢাকা হয়ে ট্রানজিট/ট্রান্সফার কার্গো পরিবহনের  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করার যে সাহস, নেতৃত্ব এবং নিরলস প্রয়াস প্রয়োজন, তা আজকের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রমান করেছে। আকাশপথে বাংলাদেশের কার্গো পরিবহণ খাতে এই প্রগতির পেছনে বিমান শুধু একজন অংশীদার নয়—এক নির্ভরযোগ্য অগ্রদূত। কার্গো এখন কেবল পরিবহন সেবা নয়, এটি দেশের স্বপ্ন, গর্ব ও বিশ্বজয়ের প্রতীক। আর সেই প্রতীকে নতুন ডানা যোগ করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

ইএইচ

Link copied!