ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

সক্রিয় ভেজাল ওষুধচক্র

মাহমুদুল হাসান

নভেম্বর ৩০, ২০২২, ১২:৫৯ এএম

সক্রিয় ভেজাল ওষুধচক্র

গ্রাম থেকে শহর— সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে ভেজাল ও মানহীন ওষুধ। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি অসাধু চক্রটিকে আরও সক্রিয় করেছে। টাকার বিপরীতে ডালারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, প্যাকেজিংয়ের খরচ বৃদ্ধিসহ ওষুধের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে— এ মর্মে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।

অন্যদিকে ভেজাল কারবারিদের খরচ বাড়েনি। উল্টো লাভ বেড়েছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানী ও তার বাইরে বিভিন্ন জেলায় কারখানা স্থাপন করেছে তারা। সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালে চলছে জরুরি ও জনপ্রিয় ব্যাচের  ভেজাল ওষুধ তৈরি।

শক্ত সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে এসব মানহীন ওষুধ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাদ যায় না রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলির দোকানও। সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগের একটি ফার্মেসি থেকে গ্যাস্ট্রিকের জনপ্রিয় ওষুধ সার্জেল কিনে হতবাক উন্নয়নকর্মী ইশতিয়াক। দোকান থেকে কেনা সার্জেল ও ঘরে থাকা খালি পাতার রঙের মধ্যে মিল নেই। কোনটা আসল আর কোনটা নকল চেনা যাচ্ছে না। ওষুধটি যাচাই করতে তিনি ওষুধের কয়েকটি চেইনশপে সার্জেল  কেনেন।

পরে নিশ্চিত হন প্রথম কেনা সার্জেল ভেজাল। যদিও প্রথমে কেনা ফার্মেসির মালিক ওষুধটি বিক্রির কথা অস্বীকার করেন। ইশতিয়াকও ওষুধ কেনাসাপেক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপনের অভাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেননি। দেশের অধিকাংশ ফার্মেসি কেনাকাটার ভাউচার দেয় না। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে অসাধু চক্র ও কতিপয় ফার্মেসি মালিক। প্রতারিত হয়েও প্রমাণসাপেক্ষে অভিযোগের রাস্তা খোলা নেই।

শুধু সার্জেল নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে— সবচেয়ে বেশি ভেজাল বিক্রি হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের সেকলো, ইনসেপ্টা ফার্মার অ্যাজমা ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যার মনটেয়ার, ন্যাপ্রোক্সেন, এিম ল্যাবরেটরিজের মোনাস-১০, শারীরিক নানা জটিলতায় জনপ্রিয় ফিনিক্স, লোসেকটিল, প্যানটনিক্স বা ইটোরিক্স এবং বেক্সিমকো ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক সেফ-৩।

ইশতিয়াকের মতো ভেজাল ওষুধ কিনে প্রতারিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজল রায় আমার সংবাদকে বলেন, ওষুধের বিজ্ঞাপন ও প্রচার নেই। তাই ক্রেতাদের আসল-নকল বোঝারও তেমন উপায় নেই। ফার্মেসিগুলোর ওপর ভরসা করে আমরা ওষুধ কিনে খাই। সেখানে ভেজাল কারবারিদের দৌরাত্ম্য থাকলে নিরাপত্তাটি আর কোথায় থাকল? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) আরও আশঙ্কার খবর দিয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যেসব ওষুধ বিক্রি হয়, তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের  ও ভেজাল।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভেজাল ওষুধ তৈরির নিরাপদ স্থান হিসেবে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার, কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, ডেমরাসহ পুরান ঢাকার কিছু এলাকাকে বেছে নিয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে সম্প্রতি ঢাকার বাইরেও কারখানা গড়ে  তোলা হয়েছে। এসব কারখানায় ইটের গুঁড়োর সঙ্গে নানা ধরনের রঙ ও কেমিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল ওষুধ বানানো হয়।

শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধই নয়— ইনহেলার, অয়েন্টমেন্ট বা ইনজেকশনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার মিটফোর্ড। সেখান থেকে চক্রের মাধ্যমে এসব ওষুধের সিংহভাগ গ্রামে পৌঁছে যায়। প্রতিনিয়ত এমন ভেজাল ও মানহীন ওষুধ মূল কারবারি থেকে সরবরাহকারী ও ফার্মেসির হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অল্প কিছুদিন সাজা ভোগের পর বেরিয়ে এসে পুনরায় নেমে পড়ে পুরোনো পেশায়।

ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে ভেজাল ওষুধচক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন  রাজধানীর অন্তত এক ডজন ওষুধ বিক্রেতা। তাদের মতে, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতি এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের দাম বেড়েছে। এ সুযোগে আগের মতো অল্প মূল্যে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে অধিক মুনাফা তুলে নিচ্ছে চক্রটি।

দেশে ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করা হয় বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত হয়, একদম হয় না তা বলব না। ওষুধে ভেজাল হলে কখনো কখনো রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হয়। রোগীর কিডনি বিকল হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

ইতোমধ্যে ওষুধ আইন, ২০২২-এর একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, যা মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদিত হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ আইনে লাইসেন্স ব্যতীত ওষুধ উৎপাদনকারীদের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। লাইসেন্স ব্যতীত ইন্টারনেটে বা যে কোনোভাবে ওষুধ বিক্রি করলে তার জন্য পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা আছে। আর কেউ যদি লাইসেন্স ব্যতীত ওষুধ আমদানি করে, তার ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে।

সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকারী মো. ইকবাল হোসেন ওরফে রানাকে পেনটনিক্স ২০ এমজি ২৫ হাজার ৪৮০ পিস, সেকলো ২০ এমজি ৩৬ হাজার পিস, সারজেল ২০ এমজি ৯২ হাজার পিস, ফিনিক্স ২০ এমজি এক লাখ আট হাজার ৫০০ পিস, লোসেকটিল ২০ এমজি ৩৬ হাজার পিস ও ইটোরিক্স পাঁচ হাজার ৪০০ পিসসহ মোট তিন লাখ পিস ভেজাল ওষুধসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। ডিবি জানায়, নকল ওষুধের মধ্যে সব থেকে বেশি আছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। এসব ওষুধ সৈয়দপুর থেকে আসে ঢাকায়। পরে নামি-দামি বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে বা নামে এসব নকল ওষুধ রাজধানীর বিভিন্ন বড় ফার্মেসিতে বিক্রি হয়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেন, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ভেজাল ও মানহীন হলে মানুষের প্রতিকারের কোনা যায়গা থাকে না। ভেজাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিডনি, লিভারসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে। ওষুধের মতো জীবন রক্ষাকারী বিষয়ে যারা ভেজাল করে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। নয়তো গুরু পাপের লঘু শাস্তি পেয়ে অনেকেই এসে পুরোনো পেশায় ভর করে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে সক্রিয় হতে হবে। সারা দেশে ওষুধের ভেজাল রোধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত বাজার থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে টেস্ট করতে হবে। এজন্য দেশের ল্যাবসংখ্যাও বাড়াতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব আমার সংবাদকে বলেন, ভেজাল ওষুধ মানেই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সিম্পল কথা, মানহীন ও ভেজাল ওষুধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব ওষুধ কারবারির বিরুদ্ধে তৎপর হতে হবে। বাজার থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে নিয়মিত সব ব্যাচের ওষুধ টেস্ট করতে হবে। দুঃখের বিষয় দেশে যত ব্যচের ওষুধ উৎপাদিত হয়, সে হিসেবে ল্যাব নেই। আরও ল্যাব বৃদ্ধি করতে হবে। ভেজাল ও মানহীন ওষুধ তৈরি, সরবরাহ ও বিপণনে যুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে আইনটি দ্রুত পাস করতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ভেজাল ও মানহীন ওষুধের বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সব সময় সক্রিয়। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে থাকি। বাজার থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করি।

ক্রেতাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি মিটিংয়ে আমরা বলেছি, ওষুধ বিক্রির সময় অবশ্যই মানি রিসিপ্ট দিতে হবে। সেখানে ওষুধের ব্যাচ নম্বরও লিখতে হবে। এসব প্রমাণ থাকলে মানহীন ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা সম্ভব হবে না। নয়তো অনেকে ভেজাল ওষুধের অভিযোগ করলেও প্রমাণের অভাবে কারবারিরা পার পেয়ে যায়।

Link copied!