Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫,

২৩ বছরেও সম্ভব হয়নি মশকনিধন

দায় কার

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুলাই ৬, ২০২৩, ১২:০১ এএম


দায় কার

ভয়াবহতায়ও স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়হীনতা

  • মশকনিধনে ব্যর্থতার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দুষছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
  • চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগকে কাজ করার কথা বলছেন ডিএসসিসির মেয়র
  • দোষারোপের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ক্রমেই ভয়ঙ্কর হচ্ছে ডেঙ্গু। এবার অতীতের ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে হুহু করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও সরকারি কোনো উদ্যোগেই যেন দমানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। ডেঙ্গুরোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। সেই সঙ্গে রোগীর অতিরিক্ত চাপে নাকাল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও থেমে নেই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের একে অপরকে কাদা ছোড়াছুড়ি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে সিটি কর্পোরেশনকে মশকনিধনে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মশকনিধনে ব্যর্থতার জন্য সিটি কর্পোরেশনকেই দুষছেন তিনি। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে যাচ্ছে। সে জন্য ডেঙ্গুতে মৃত্যুরোধ করতে দ্রুত এডিস মশা নিধন করা প্রয়োজন।’ তবে এডিস মশা পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব নয় জানিয়ে চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগকে কাজ করার কথা বললেন ঢাকা দক্ষিণ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু দেখা দিলেও গত ২৩ বছরে তা নিধন করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগ দিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ, তেমনি ডেঙ্গু একটি বাহকজনিত রোগ। তাই দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এটি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। 

মেয়র তাপসও বলছেন, একজন রোগী যাতে মৃত্যুর শঙ্কা অবস্থায় না যায় সে জন্য প্রাক-চিকিৎসা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা মৃত্যুর হার কমাতে পারব। এ বছর বর্ষা শুরুর আগেই মারাত্মক রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বছরের সাত মাস না যেতেই সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও নজর দেয়ার পরামর্শ দেন মেয়র তাপস। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার মান ও পরিধি আরও বাড়াতে হবে।’ 

এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগে থেকেই দুই সিটি কর্পোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক মাস আগে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেও ঢাকার দুই সিটি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি বলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হয়েছে বলে বলছেন নগরবাসী। এ নিয়েও দুই সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রয়েছে ঠেলাঠেলি। 

উত্তর সিটি সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, মশকনিধন কার্যক্রম আশানুরূপভাবে হয়নি। যদি হতো তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নিতো না। তবে জনসচেতনতা বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে উত্তর সিটি। আজ থেকে আগামী ১৩ জুলাই নাগাদ বিশেষ অভিযানও চালাবে সংস্থাটি। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা শুরু থেকেই মশকনিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও নগরবাসী তাদের এই কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন। 

দক্ষিণের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে যেভাবে মশকনিধনের কথা বলা হচ্ছে, সেভাবে তাদের কর্মীদের মাঠে পাওয়া দুষ্কর। শুরু থেকেই তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত। 

যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, দনিয়াসহ দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মশকনিধন কর্মীদের মাসেও একবার পাওয়া যেত না। এখন যদিও সিটি কর্পোরেশন চিরুনি অভিযান পরিচালনা শুরু করছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এই কার্যক্রমও আর চার-পাঁচগুণ বাড়াতে হবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে দেরিতে ভর্তির কারণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫০ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে বলেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন তাদের ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে। 

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, এবার বছরের প্রথম ছয় মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে সাধারণত জুনের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। তাই আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর আক্রান্ত বেশি হলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলমান সংকটকালীন সময়ে একে অপরকে দোষারোপের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সমন্বয় করে মশকনিধনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

উল্লেখ্য, সারা দেশে এরই মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে গত ৩ ও ৪ জুলাই ডেঙ্গুতে সারা দেশে মারা গেছে যথাক্রমে চার ও পাঁচজন।
 

Link copied!