নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১২:০৪ এএম
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে আবারও রোহিঙ্গার ঢল নামছে বাংলাদেশ সীমান্তে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর হিসাবে গত দেড় বছরে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
এর বাইরে সামপ্রতিক সংঘাতে আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়েছে, যারা যেকোনো সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম।
গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। নাম প্রকাশ না করে বৈঠকে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর রোহিঙ্গা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে প্রায় ৯৫ কোটি ডলারের জন্য আবেদন করা হয়। এ পর্যন্ত অর্ধেকের কিছু বেশি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এখন জরুরিভাবে ১৭ কোটি ডলারের প্রয়োজন। এই তহবিল সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই থেকে কক্সবাজারের অল্প কয়েকটি এলাকায় শরণার্থীদের ঘনবসতি স্থাপিত হয়। বর্তমানে মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এদের মধ্যে দেড় লাখ গত দেড় বছরে এসেছে, যা এই অঞ্চলকে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, নতুন করে বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। এসব শিশু ও নারীর বড় অংশই বর্তমানে জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হলো শিক্ষা সংকট। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু শিক্ষার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এর মধ্যে ৬৩ হাজার শিশু নতুন করে আসা। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে এ শিশুরা ভবিষ্যতে দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও অপরাধের বলয়ে আটকা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিলেও মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ইউএনএইচসিআর সতর্ক করে বলেছে— দ্রুত অর্থ না এলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। প্রয়োজনীয় রান্নার গ্যাস (এলপিজি) ফুরিয়ে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য সহায়তাও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনাহার ও অপুষ্টি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এরইমধ্যে সম্প্রতি রাখাইনে মিয়ানমার সেনা ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষে হাজারো রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে সীমান্তে এসে জমায়েত হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ঘটছে। যদি বড় আকারে অনুপ্রবেশ শুরু হয়, সেটি সামলানো খুব কঠিন হবে।
ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার নজির সৃষ্টি করেছে। এখন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উচিত বাংলাদেশসহ আশ্রয়দাতা দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানো। সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলছে— রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য।