Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪,

জাপা চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবি

মো. মাসুম বিল্লাহ

অক্টোবর ১১, ২০২২, ০৯:৪৩ পিএম


জাপা চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে অবাঞ্চিত ঘোষণার দাবি

এক মুখে দু রকম কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, এমন দাবি পার্টির জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতাদের। তারা বলেন, জিএম কাদের একবার বলেন বেগম রওশন এরশাদ তার মায়ের মতো, আবার তাকে বহিস্কার-অব্যাহতির হুমকি দেন। এটা তার দ্বিমূখি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। যা রাজনৈতিক অদক্ষতার পরিচয় বহন করে। তাই অযোগ্য ও অদক্ষ চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে সারাদেশে অবাঞ্চিত করার দাবি তোলেন রওশনপন্থী নেতারা।

সোমবার থেকে সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দুদিনের "জরুরি সভার" শেষ দিন মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। এতে ২৬ নভেম্বর আহুত জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত পার্টির মূখপাত্র হিসেবে দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে দায়িত্ব দেয়ার আহবান জানানো হয়।

বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে জাপার জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সদস্য সচিব ও বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ বলেন, চুন্নু-কাদের গংরা বেগম রওশন এরশাদকে ক্যান্সার আখ্যা দিয়ে বলছেন, শরীরের কোথাও ক্যান্সার হলে সময় থাকতে সেই অংশ কেটে ফেলতে হয়। গোলাম মসীহ্ বলেন, আপনারা সীমা লঙ্ঘন করছেন। দৈর্যের বাঁধ ভাঙবেন না। জনাব চেয়ারম্যান আপনি আপনার অনুসারিদের নিয়ন্ত্রণ করুন। তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে থেকে বক্তব্য দেয়ার আহবান জানান রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব।

তিনি বলেন, সম্পদের মালিক কখনও সম্পত্তির ক্যান্সার নয়। সম্পদ যখন অন্যকে দেখভাল করতে দেয়া হয়, তখন অযোগ্য পরিচালকের অদক্ষতায় আগাছা-পরগাছা জন্মায়। এসব আগাছা-পরগাছা সময় মতো উপড়ে ফেলতে হয়। যারা বেগম রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদকে নিয়ে কটূকথা বলছেন, তাদের হুশিয়ার করে দিচ্ছি, সময় এসে গেছে সব আগাছা-পরগাছা উপড়ে ফেলা হবে, ইনশাল্লাহ।

দ্বিতীয় দিন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ ও জাতীয় পার্টির ক্রান্তিকালে বেগম রওশন এরশাদ সব সময় অভিভাবক হিসেবে অর্বিভূত হয়ে আজও দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। সেই মানুষকে নিয়ে যারা নানা ধরনের মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়েছেন, জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।

সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ২০১৪ সালে যারা রওশন এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে বলেছিলেন, তারা আজ নতুন গল্প তৈরি করছেন। তাদেরই ইন্ধনে স্বীকৃত বিএনপির পেইড সাংবাদিকের উপস্থাপনায় এরশাদ ও রওশন এরশাদকে নিয়ে মিথ্যা নাটক বানিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে, যা ডিজিটাল আইন লঙ্ঘনের শামিল। এবিষয় আইনশৃঙ্খরাবাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান এই জাপা নেতা।

পার্টির চেয়ারম্যানকে আরো সংযত ভাষায় কথা বলার পরামর্শ দেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ। পাশাপাশি তিনি বলেন, আজ অবৈধ মহাসচিব যে ভাষায় কথা বলছেন, তা একদিন বুমেরাং হবে। বিএনপির টিকেটে এমপি হতে যাওয়া চুন্নু রওশন এরশাদের গাড়ির পতাকা নামিয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে যে স্পর্ধা দেখাচ্ছেন, জনাব চেয়ারম্যান একদিন আপনার দিকেই সেই আঙুলি উঠবে। মনে রাখবেন আগাছা-পরগাছা বাড়তে দিতে নাই। লায় দিলে বানরও মাথায় উঠে।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি এমএ গোফরান, সাবেক এমপি ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড.জিয়াউল হক মৃধা, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক এমপি ও ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল হক নুরু, শ্রমিক নেতা শাহ আলম তালুকদার, মুক্তার উদ্দিন মাসুম, খন্দকার নুরুল আনোয়ার বেলাল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুস্তাকুর রহমান মুস্তাক, মিজানুর রহমান দুলাল, সাইফুল ইসলাম পিটু, মো. নজরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন জহির, হাসনা হেনা, মনোয়ারা তাহের মানু ও শেখ রুনাসহ আরো অনেকে।

দু‍‍`দিনের সভায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ঘোষিত আসন্ন জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পূর্নবন্টনের সিদ্ধান্ত হয়। চলতি সপ্তাহে পার্টির আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে অর্ন্তভূক্তির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এই বৈঠকে। যা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই অসমাপ্ত জেলার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিগুলো সম্পন্নের নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খন্দকার নুরুল আনোয়ার বেলালের নাম প্রস্তাব করা হয় বৈঠকে।

এদিকে বেগম রওশন এরশাদের গাড়ি থেকে পতাকা নামিয়ে ফেলার যে হুমকি দিয়েছেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, তার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে খুলনা, রংপুর, নোয়াখালী, নাটোর, নড়াইল, সিলেট, যশোর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি।

এদিকে ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় তরুণ পার্টির সভাপতি কাউছার আহমেদকে বহিস্কারের প্রতিবাদে ময়মনসিংহে পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইমামের বিরুদ্ধে ঝাঁড়ু মিছিল করেছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এসময় তার ছবি সম্বলিত ব্যানার ও কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গেলো শনিবার ৮ অক্টোবর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশে ফিরে রওশন এরশাদ নীতিগতভাবেই গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁর উচিত পতাকা নামিয়ে ফেলা। এছাড়া রওশন এরশাদের ডাকা আগামী ২৬ নভেম্বরের কাউন্সিল বাতিল না করলে, তাকে ও পল্লীবন্ধুপুত্র সাদ এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইএফ

Link copied!