ইলিয়াছ সুমন, সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম)
মে ২২, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
ইলিয়াছ সুমন, সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম)
মে ২২, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক সাইক্লোন সেন্টার দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। একসময় দুর্যোগকবলিত মানুষের প্রাণরক্ষার একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল এই ভবনটি। অথচ আজ সেই কেন্দ্রটি সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত ও ভগ্নদশাগ্রস্ত রূপে।
স্থানীয়দের মতে, ১৯৬২ সালে তৎকালীন মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম সামছুল হকের উদ্যোগে এবং হারামিয়া গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আজিরণ মিয়ার জমি দান করে নির্মিত হয়েছিল এ আশ্রয়কেন্দ্রটি। শুরুতে এটি শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, ১৯৮০-এর দশক থেকে এটি মগধরা ডাকঘর হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ এটি ছিল একটি বহুমুখী জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এই সাইক্লোন সেন্টারটির ব্যবহারে ভাটা পড়ে এবং ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় একটি পরিত্যক্ত ভবনে। বর্তমানে ভবনটির চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঘন ঝোপঝাড়, প্রবেশের কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই। আশপাশে গড়ে উঠেছে গুপ্তছড়া বাজারের ময়লার স্তূপ। সেখানেই ফেলা হয় পশুপাখির নাড়িভুঁড়ি। কেউ কেউ এই পরিত্যক্ত ভবনটিকে খোলামেলা টয়লেট হিসেবেও ব্যবহার করছেন—যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়ানক হুমকি।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ভবনের এমন অবস্থা যে, কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে সাহস পান না। ভবনের ভেতরে সাপসহ বিষাক্ত প্রাণীর বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাইক্লোন সেন্টারটি এখন একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বা ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলেই এই এলাকার মানুষকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হয়। কারণ নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ না থাকায় তারা প্রকৃত দুর্যোগে অসহায় হয়ে পড়েন। অথচ তাদের চোখের সামনেই একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে—যা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরিণত হতে পারত।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু জাফর বলেন, “আমরা প্রতি বছর ঝড় আসলে আতঙ্কে থাকি। অথচ আমাদের সামনেই একটি আশ্রয়কেন্দ্র পড়ে আছে, যেটা কোনো কাজে আসে না। প্রশাসনের একটু নজর দিলে হয়তো বহু প্রাণ বাঁচানো যেত।”
এ ব্যাপারে এলাকার মানুষজন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা চান, জরুরি ভিত্তিতে এ ভবনটি সংস্কার ও পুনঃচালু করা হোক, যাতে ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।
স্থানীয়দের দাবি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাইক্লোন সেন্টারটি নতুনভাবে সচল করে তোলে, যাতে এটি মানবিক সহায়তার এক শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
আরএস