ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

সাংবাদিকদের পক্ষে কেউ কি নেই...

মোমিন মেহেদী

মোমিন মেহেদী

আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম

সাংবাদিকদের পক্ষে কেউ কি নেই...

গণমাধ্যমের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে বরাবরই দেখেছি ছাত্র-যুব-জনতার একটি অংশ সবসময় সরকারি দলে লিখে রাখেন নিজেদের নাম। এরা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি যেমন করেন, তেমনই ধর্ম-মানবতাকে কুক্ষিগত করে ধর্ম বিরোধী-মানবতাবিরোধী কর্মকে কোনো না কোনোভাবে জাস্টিফাই করেন। আর এ কারণেই যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারের সাথে সম্পৃক্তরা হয়ে ওঠেন নির্মম সন্ত্রাসী। সেই সন্ত্রাসীদের দ্বারা স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছরে হামলার শিকার হয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক সাংবাদিক। এসব ঘটনায় মামলা হলেও আসামীদেরকে অধিকাংশ সময়ই গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরো জোরে সোরে নামে মিথ্যে মামলা ও হামলার রাস্তা ধরে। এদেরকে কোনো সরকারই প্রতিহত করার চেষ্টা করেনি, দাঁড়ায়নি সাংবাদিকদের পাশে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়েও।

সর্বশেষ আমরা দেখলাম- গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করলো কিছু মানুষ। সাংবাদিকদেরকে কোনো সরকারই নিরাপত্তা দেয়নি, তাদের উপর হামলার বিচার করেনি, এমনকি খুনিদেরও বিচার করেনি কোনো সরকার। যে কারণে খুনিরা সাহসী হয়েছে, হামলাকারীরা সাহসী হয়েছে, মিথ্যে মামলাকারীরা সাহসী হয়েছে। সেই সাহসের পথ ধরেই এই অপরাধ এখন পান্তা ভাতের পানি হয়ে গেছে। সেই পানি ইচ্ছে হলেই যে কারো দিকে খুনিরা ছুড়ে মারছে। কারণ তারা দেখেছে- সাগর-রুণীর হত্যার বিচার হয়নি যুগ প্রায় পার হয়ে গেলেও। সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার পর অবশ্য বলা হয়েছে- ‘৫ আগস্টে পুলিশ মারার কারণে পুলিশ ভয় পাচ্ছে।’ গণমাধ্যম অবশ্য বলছে- গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এর একটি হচ্ছে গাজীপুরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের ধাওয়া দেওয়ার ভিডিও ধারণ করা এবং আরেকটি হচ্ছে পূর্বশত্রুতার বিষয়।

পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে তারা। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মিজান ওরফে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপি, মো. স্বাধীন ও আল আমিন। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এই চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ছিনতাইকারী দলের সদস্য। এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে। এই আটক আটক খেলা আমজনতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তারা চায় সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে আর কেউ কখনো সাংবাদিকদের উপর হামলার দুঃসাহস দেখাতে না পারে।

যতদূর জেনেছি- গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকার-এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তের কিছু দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশি অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। সম্প্রতি  কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। পেছন দিক থেকে নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তাঁর সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করেন। এতে নীল শার্ট পরা ওই ব্যক্তি দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থাকলেও এক বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যার প্রায় ২৩ শতাংশ নির্যাতনই হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। আইন ও সালিশ লিস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ১১৯ জন সাংবাদিক নানামুখী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হন। এদের মধ্যে ৩৮ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার এবং ১৯ জন প্রকাশিত সংবাদের জেরে মামলার শিকার হন। ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত সেই হামলা-মামলা ও খুনের রেকর্ড ভয়াবহভাবে আতঙ্ক তৈরি করছে।

এই যখন অবস্থা তখন নির্মম একটা হামলার ঘটনা সামনে চলে আসে। সেটি হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি অবজারভার পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগ উঠে হল ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী তাওসিফ বলেন, ‘তারা আমাকেসহ সাংবাদিক সমিতি, সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। তুষার হুসাইন আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে ধাক্কা দেন। আমার ধারণা, তুষার হুসাইনের বিরুদ্ধে ডেইলি অবজারভারে ছিনতাইয়ের নিউজ করায় তিনি আগে থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বের হয়ে আসলে তাদের আমি বিষয়টা জানাই। পরে তাদের উপস্থিতিতেই আমাকে শাসানো হয় ও উগ্রভাবে বারবার তেড়ে আসতে থাকেন।’ এই ঘটনার পর সেই তুষারের কোনো কঠোর বিচারের সংবাদ দেখিনি কোনো গণমাধ্যমে। তবে মনে আছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হলেও বেড়ে যায় সাংবাদিক নির্যাতন। যা চলমান আছে আজ অবধি। শুধু কি বিশ্ববিদ্যালয়ে? এই হামলা-মামলা নির্যাতন চলছে মফস্বলেও পাল্লা দিয়ে।

এমনই একটি ঘটনায়- বরিশালের গৌরনদী উপজেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের নির্বাহী সম্পাদককে মারধরের অভিযোগ উঠে পৌর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান লাইভ প্রচারের সময় পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ হাওলাদারের নাম প্রচার না করায় সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় রাশেদ হাওলাদারকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে এই সাংবাদিকের পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের ১৩ নেতা-কর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়।’ কিন্তু তাতে কি কোনো সমাধান আসে? আসে না। বরং নির্মমতা বেড়ে যায় সারাদেশে সাংবাদিক সমাজের সাথে। তারই পথ ধরে ফেনীর বিতর্কিত সাবেক পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নির্দেশে পুলিশের দেওয়া গায়েবি মামলায় এসএম ইউসুফ আলী নামে এক সাংবাদিককে গভীর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন দুপুরে তাকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে তোলা হলে জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় শুরু হয়।’ সেই পর্যন্তই শেষ! সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে মানবতা বিরোধী-দুর্নীতিবাজ-জানোয়ার রাজনীতিকরা।

সেই কাতারে এখন দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের একটি বড় অংশকে। যারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চাকুরিতে কোটা বাতিল করতে এসেছিলো। ক্ষমতাসীনরা আসে, ক্ষমতাসীনরা যায়, সাংবাদিকরা থেকে যায় অবিরাম জীবন সংগ্রাম, ক্ষুদা-দারিদ্র-দেশপ্রেম-মানবতা আর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কূটচালের ভেতরেই। হয়তো এ কারণেই ২০২৩ সালে সম্ভবত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খবর সংগ্রহকালে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন মানবজমিন ডিজিটালের রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ ও দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টার হাসিব পান্থ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার শিকার আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, প্রেস ক্লাব এলাকায় আমরা নিউজ কাভার করতে আসি। এ সময় ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা মানববন্ধনের নিউজ কাভার করার জন্য দাঁড়ালে মুহূর্তে কয়েকশো ছেলে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা শুরু করে। আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা আমার দুটি মোবাইলফোন, মানিব্যাগ, আইডি কার্ড ও সঙ্গে থাকা আরেকটি ব্যাগ নিয়ে যায়। হাসিব প্রান্ত বলেন, আমার আইফোন ইলেভেন প্রো, মানিব্যাগের ১০ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পুলিশের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।’ এমন নিরবতাই হয়তো কেড়ে নিয়েছে অনেক সাংবাদিকেরও প্রাণ।

অতীতের অনেক খবরাখবরের মত ২০০৪ সালের ১ টা খবর বাংলাদেশের মানুষের সামনে এসেছিল। আর তা জেনে সারাদেশ শোকাহত হয়েছিলো। সেই সংবাদে জানা যায়, সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা নিহত। মানিক চন্দ্র সাহা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন বলে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক বজলুর রহমানের কাছে নিরাপত্তা চান। মানিক সাহা আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের পর খুলনা প্রেসক্লাবে যান। খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে তার উপর বোমা নিক্ষেপের ফলে বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তার হত্যাকান্ডে শোক প্রকাশ ও নিন্দা জানান, কিন্তু কঠোর বিচার? কঠোর বিচার আর পায়নি বাংলাদেশ। মানিক চন্দ্র সাহার হত্যাকা্লের প্রতিবাদ করা তার সহকর্মী, হুমায়ুন কবীর বালু তার তিন দিন পর পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির হাতে খুন হন। খুলনা নগরীতে বালু তার মায়ের বাড়ি থেকে আসার পরে তিন সন্তানকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢোকার সময় তার নিজ বাড়ির সামনে বোমা হামলায় নিহত হন। ২০২০ সালে বালুকে হত্যার দায়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। অপরাধ ও দুর্নীতি বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত বাংলাদেশি প্রিন্ট সাংবাদিক গৌতম দাসকে ২০০৫ সালের ১৭ই নভেম্বর তার অফিসে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় এবং তার হাত ও পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। তিনি ঢাকা-ভিত্তিক দৈনিক সমকালের জন্য একটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মকর্তাদের অবৈধ দুর্নীতির বিস্তারিত প্রতিবেদন উঠে আসে।

এছাড়াও, দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায় যে, দাস নির্মাণ চুক্তি বাগে আনার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে লিখেছিলেন। ২০০৬ সালের ১৯ জানুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৩ সালের ২৭ জুন নয়জন হামলাকারীকে গৌতম দাসকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ্ল দেয়া হয়। নয় আসামির মধ্যে একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলে, বাকি আটজনই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নবীন রাজনীতিবিদ। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে সাংবাদিক ফতেহ্ ওসমানী তার বন্ধু আব্দুল মালেককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ শাহ মীর (র.) মাজারের সামনের রাস্তায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ফতেহ ওসমানী ও তার বন্ধু আব্দুল মালেক আহত হন। ২৮ এপ্রিল রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের পেশাগত দৃঢ় কর্মকা্লের কারণে ঢাকায় নিজ বাসভবনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক উভয়েই ছুরিকাঘাতে নিহত হন। মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকলেও ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে দু’জন ব্যক্তি তাদের হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু আসামি অধরা রয়ে যায়, বিচারও হয়নি গত ১৩ বছরেও। বরং ঝুলে আছে বছরের পর বছর। আফতাব আহমেদ ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডের নিজ বাড়িতে খুন হন। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ও জানায় যে, লাশের হাত ও পা বাঁধা ছিল এবং মুখে একটি গ্যাগ লাগানো ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ কর্তৃক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানানো হয় তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ তাকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদ্ল দেওয়া হয়। কিন্তু সাজা এখনো কার্যকর হয়নি।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুরের মণিরামপুরে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন চিকিৎসার জন্য প্রথমে শিমুলকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য শিমুলকে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যের প্রতিবাদে উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (বাদল)। ওই সময় কাদের মির্জা ও বাদল গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার একদিন পর ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

২০২২ সালের ৩ জুলাই রাত ৯টার পর থেকে নিখোঁজ হন স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি এবং কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান রুবেল। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গড়াই নদী থেকে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছর ৮ জুন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার আব্দুল বারীর রক্তাক্ত মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা এলাকা থেকে উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ছয় সাংবাদিক। ঢাকার রাজপথ থেকে শুরু করে জেলা শহর পর্যন্ত তারা ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী, তথ্যানুসন্ধানী জনতার কণ্ঠস্বর। আন্দোলনে গুলির মুখেও সংবাদ সংগ্রহে পিছপা হননি তারা। জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হলেও তাদের সেই আত্মত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। নিহতদের পরিবারগুলোও পায়নি কোনও স্থায়ী সহায়তা। অতীতের মত সরকার কিংবা মূলধারার সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সেটি রয়ে গেছে সাময়িক অনুদান বা শোকবার্তায় সীমাবদ্ধ। শহিদ সাংবাদিকদের কেউ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, কেউবা ছিলেন নবজাতক সন্তানের বাবা। কোনও কোনও পরিবার আর্থিক সহায়তা পেলেও কারও কারও পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। চলুন নীতির পথে থাকি, এগিয়ে যাই আলোর জন্য-ভালোর জন্য। যাতে করে সাংবাদিক সমাজ থাকে নিরাপদ, দেশ হয় ধর্ম-মানবতা-সুশিক্ষা-সুসমাজ-সভ্যতার পথে এগিয়ে চলা মানচিত্র...

লেখক : কলামিস্ট

Link copied!